পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নাগরিক সুবিধার বিবেচনায় পিছিয়ে পড়া জনপদও। অভিযুক্ত ও অযোগ্য কর্মকর্তাদের পার্বত্য জেলাসমূহে শাস্তিমূলক বদলির প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকা-এর সভাপতি এ এইচ এম ফারুক, সিনিয়র সহসভাপতি জনাব মিতায়ন চাকমা এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংগঠনের পক্ষে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, এমন কর্মকাণ্ডের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্পষ্টত হেয় এবং ছোট করা হচ্ছে। এর দায় রাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তাগণ কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, অসৎ ও অযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভয়ারণ্য হিসেবে কেন পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেছে নেওয়া হবে? বরং বহু জনজাতির মিলনমেলা বিশেষায়িত পার্বত্য চট্টগ্রামের সুশাসন ও সরকারি সেবা নিশ্চিত করার জন্য সৎ ও দক্ষ এবং মেধাবী কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন।
পাহাড়ের ৩ জেলায় বিভিন্ন জাতির বসবাসের কারণে একদিকে যেমন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তেমনি অন্য ৬১ জেলার তুলনায় বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এলাকাও বটে।
কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের ৬১ জেলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হলে তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।
যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও গুরুত্বসহকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রশ্ন ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম কি তাহলে অপরাধী এবং অযোগ্যদের পুনর্বাসন কেন্দ্র? পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকা মনে করছে- এহেন কার্যক্রমের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতির প্রায় ২০ লাখ মানুষকে অসম্মানিত এবং অপমান করা হচ্ছে।
এভাবে অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পদায়নের মাধ্যমে এ জনপদকে পরিকল্পিতভাবে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।
এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযুক্ত সরকারি চাকরিজীবীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি বা পদায়ন না করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকা’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামকে সমতলের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নিতে সৎ ও যোগ্য এবং মেধাবী কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে, মেধাবীদের পাহাড়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে, আগ্রহী করতে প্রণোদনা বা পুরস্কারের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
ভবিষ্যতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা অভিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক পদায়ন হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করলে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া সেই সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়। ২৩ জুলাই মো. মনিরুজ্জামান খানকে বদলি করার এ প্রজ্ঞাপন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর আগেও এমন অনেক শাস্তিমূলক বদলির ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটেছে।
কেকে/এএস