সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকের বাজার-শিলের ভাঙ্গা সংলগ্ন ধলাই নদীর পার যেন এক টুকরো চাঁদার হাট। এই হাটে চাঁদাবাজদের নিয়মিত লেনদেন হয়। চাঁদাবাজি যেন বৈধ পেশায় পরিণত হয়ে উঠেছে।
নদীর পারে স্থাপিত ২০ থেকে ২৫টি ভাইব্রেটর মেশিন। এগুলো ভলগেট নৌকায় বালু লোডিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। উপজেলার কালাইরাগ, শাহ-আরফিন, কলাবাড়ী, ধলাই ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইজারাবহির্ভূতভাবে উত্তোলিত বালু টুকের বাজার-শিলের ভাঙ্গা সংলগ্ন ধলাই নদীর পারে ডাম্পিং হয়। এরপর ভাইব্রেটর মেশিনের মাধ্যমে ভলগেটে লোড হয়। এসব বালু ক্রয় করতে কিংবা ভলগেটে লোড নিতে গেলে বালু পাথর ব্যবসায়ী সমিতিকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। নদীপথে আইনি ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ম্যানেজের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে কথিত এই সমিতি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে ম্যানেজ করার নামে প্রতিটি ভলগেট থেকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা আদায় করেন কথিত এই সমিতি। সমিতির পক্ষে চাঁদা তোলেন দুলাল ও বাদশা নামে দুই ব্যক্তি। এদেরকে লাইনম্যান বলে ডাকেন বালু ব্যবসায়ীরা। যেসব বালুবাহী ভলগেট নৌকা সমিতিকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদেরকে পুলিশ দিয়ে আটকের ভয় দেখান তারা।
তবে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে বালু ব্যবসায়ীরা সানন্দেই চাঁদা দেয়। ওসির পক্ষে চাঁদা আদায় করেন পুলিশের উপপরিদর্শক আসিফ ইকবাল। ব্যবসায়ীরা তাকে ক্যাশিয়ার নামে ডাকেন। প্রতি সন্ধ্যায় নৌকা গুনে টাকা নেন আসিফ ইকবাল। বালুবাহী ভলগেট নৌকা প্রতি সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা নেন পুলিশের এই কর্তা। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টি নৌকা থেকে শুধু ওসির নামেই চাঁদা উঠে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। আর কথিত সমিতির নামে লাইনম্যান দুলাল ও বাদশা একই অঙ্কের চাঁদা আদায় করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মাস যাবত এসব অপকর্ম চলে আসছে। থানার পাশ দিয়ে ইজারা বহির্ভূত বালু লোড করে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। ইজারা বর্হি ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলন, লোডিং এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
কথিত এই লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার যেন নদী পথের রাজস্ব আদায়কারক। এই রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা না হলেও সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল ও থানার ওসির পকেটে যায় নিয়মিত।
জুয়েল নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, এখানে নিয়মিতই বালু লোড হয়। ভলগেটের ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার পূর্বেই সমিতি ও পুলিশকে চাঁদা দিতে হবে। সন্ধ্যায় চাঁদা দিলে পরেরদিন ভোরে বালুবাহী ভলগেট ঘাট থেকে গন্তব্যে যাওয়ার ছাড়পত্র পায়।
চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে লাইনম্যান দুলাল জানায়, তারা বাল্কহেড অথবা ভাইব্রেটর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নৌকা লোড হওয়ার পর চাঁদা নেন। চাঁদার টাকা তুলে সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল মেম্বারের কাছে দেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না।
কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আসিফ ইকবাল বলেন, আমি এসবের মধ্যে নেই।
গত ২৬ জুন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় স্থানীয় সাংবাদিকরা চাঁদাবাজির বিষয়টি উত্থাপন করার পর থেকে ইউএনও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার দায়িত্ব দেন ওসিকে।
কিন্তু চাঁদাবাজির বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু আমার জানা নেই। যদি কেউ এ ধরনের কোনো কিছু করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
কেকে/এএম