‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি- বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেছেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে কোনোভাবেই বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। হাজারো শহিদের রক্তভেজা পথে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এরকম সময় বারে বারে আসবে না। কারো কোনো হঠকারিতা, বাড়াবাড়ি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে গণঅভ্যুত্থানের অসাধারণ অর্জন বিসর্জন দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক ভিন্নতার মধ্যেও রাজনৈতিক দল ও জনগণের ন্যূনতম ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জুলাই সনদ প্রনয়নে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতা দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট, স্বেচ্ছাচারিতা চালাবার লাইসেন্স নয়। কোনো ব্যক্তিই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে নয়। নির্বাহী বিভাগকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। জবাবদিহি না-করার জন্যই প্রতিষ্ঠাসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে।
ড. আলী রিয়াজ বলেন, ব্যক্তির ভালো দিকগুলো নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুযায়ী সুযোগের সমতা ও অধিকারের সাম্য নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়ে সবাই মিলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা যাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অতীতের মত এবারকার ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরিবর্তনের স্বপ্নকে কারো স্বার্থে জলাঞ্জলি দেয়া যাবে না। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই ‘গানিমাতের মাল’ হিসাবে বিবেচনা করে যা খুশি তাই করছেন। বিশ্বজিৎ আর আবরার ফাহাদের হত্যার সাথে ভাংগারী ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যার পার্থক্য কোথায়! ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতের সাথে মানুষ কেনো এ সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানো চেষ্টা করবে! এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়।
তিনি বলেন, সরকারের অকার্যকারীতায় মব সন্ত্রাস বাড়ছে। সামাজিক নৈরাজ্যের সুযোগে রাজনৈতিক লুম্পেন ও মাফিয়া সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোনো দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে একদিকে এ নৈরাজ্য আরো বাড়বে আর অন্যদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।
আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা সমালোচনা করে বলেন, চেয়ারের মজা নিতে গেলে দায়িত্বশীল আচরণও করতে হবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুন নূরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বাসদের সহ সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মজিদ আতাহারী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বাসদ (মার্কসবাদী) এর সমন্বয়কারী মাসুদ রানা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতেই জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
কেকে/ এমএস