সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
ম্যানেজ মাস্টার দেলোয়ারার বিরুদ্ধে ফের অনিয়মের অভিযোগ
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ২:০১ পিএম আপডেট: ১১.০৭.২০২৫ ২:৪৩ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

২০১৬ সালে বাঞ্ছারামপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন দেলোয়ারা বেগম। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য চলে গেলে দেলোয়ারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। সংগ্রহ করেন এইচএসসি জাল সনদ। উপর মহল ম্যানেজ করে বনে যান স্থায়ী প্রধান শিক্ষক। 

বিষয়টি ইব্রাহিম মাস্টার সাংবাদিকদের কাছে সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। সংবাদ প্রকাশিত হয়। তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু, ম্যানেজ মাস্টার দেলোয়ারা বেগমের কারিশমাটিক ম্যানেজের কাছে সবাই হেরে যায়। তদন্তের ফাঁকে তবে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে গোপনে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি সার্টিফিকেট অর্জন করে বদলী নিয়ে সরিষার চর প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে আসেন বর্তমান কর্মস্থল শিবপুরে। কিন্তু, এখানেও নতুন অভিযোগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোহান জানায়, দুপুরের বিরতির পর ক্লাস হয় না বলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না। হাজিরা খাতায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও উপস্থিত পাওয়া ১ম শ্রেণিতে ৭ জন, ২য় শ্রেণিতে ৫ জন, ৩য় শ্রেণিতে ৬ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৩ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ১ জন। আর প্রাক-প্রাথমিকের কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। অভিভাবকরা জানান, খোলার দিনেও বিদ্যালয়ের দরজা জানালা বন্ধ থাকে।

প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগমের অনিয়ম ও অসদাচরণের কারণে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিদ্যালয়ে স্লিপ বরাদ্দ থেকে শুরু করে সরকারি সব বরাদ্দ নামেমাত্র খরচ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক ইচ্ছেমতো ভোগ করে যাচ্ছেন, যা সহকারী শিক্ষকদেরও জানানো হয় না। বিদ্যালয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন বলে সাবেক কমিটির সদস্যরা জানান।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত বছরগুলোতে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে (এসএমসি) বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মনগড়া মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে আসা এবং নিয়ম ভঙ্গ করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মতো সহকারী শিক্ষকরাও নিয়ম শৃঙ্খলার ধার ধারে নাই। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসার সুযোগে সহকারী শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে ঠিক মতো আসেন না। সকাল ৯টায় স্কুল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টায় গিয়েও বিদ্যালয় বন্ধ থাকতে দেখা যায় এবং বিকাল ৩টার আগেই বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান এতটাই নিম্নমানের যে আশপাশের অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থী সংগ্রহে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমনকি কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতেও যান না। শিক্ষকগণ শিক্ষার্থী জরিপ করেন না, হোম ভিজিট করেন না। মা সমাবেশ-অভিভাবক সমাবেশ করেন না। ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করেন না।

উপস্থিতি এত কম কেন জিজ্ঞেস করা হলে, প্রধান শিক্ষক জানান আশপাশে মাদ্রাসা থাকায় শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্থানীয়দের দাবি, মূলত শিক্ষকদের খামখেয়ালীপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে।

অভিভাবক জাহিদুল হাসান রতন বলেন, “প্রধান শিক্ষকের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্কুলগামী শিশুরা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই প্রতিনিধির কাছে অর্থ ব্যয়ের কোনো ভাউচার দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। বরাদ্দের অর্থ কোথায় এবং কীভাবে খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এলাকাবাসী সুষ্ঠু  তদন্তের মাধ্যমে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম বলেন, “২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। এরপর থেকে বিদ্যালয়ে যত বরাদ্দ এসেছে, সব কাজে ব্যবহার করেছি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করেছি। বদলিজনিত একটি বিষয়ে আমাকে হয়রানি করতে কিছু মানুষ মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী শিক্ষক বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের কোনো কিছু জানাতে চান না। সরকারি কোনো বরাদ্দ কীভাবে খরচ হয় তাও গোপন রাখেন। উনি নিয়মিত দেরি করে স্কুলে আসেন, অথচ কেউ কিছু বললেই হঠাৎ ক্ষেপে যান এবং রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। তখন স্কুলে কেউ আর কিছু বলতে পারে না। এতে সহকর্মী হয়েও আমরা অনেক সময় অসহায় অবস্থায় পড়ি।”

চলতি বছর ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টায়ও বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক আসেননি। ৪/৫ জন শিক্ষার্থীকে বারান্দায় দেখতে পাওয়া যায়। শ্রেণিকক্ষেও দরজা জানালা বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজীজকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। আদতে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।  

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ আজ শুক্রবার জানান, আমি বিষয়টি জানতাম না। আমরা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।'

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, “অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, অর্থ ব্যয়ের হিসাব এবং দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র উন্মোচন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close