সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
আক্কেলপুর রেল ক্রসিং ট্র্যাজেডি
ভয়াবহ বাস-ট্রেন সংঘর্ষের ১৯ বছর আজ
সকেল হোসেন, আক্কেলপুর, (জয়পুরহাট)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ৫:০৮ পিএম

১৯ বছর পূর্ণ হলো আক্কেলপুরের সেই ভয়াল ট্র্যাজেডির। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সকালের বৃষ্টিভেজা মুহূর্তে আক্কেলপুর মহিলা কলেজ সংলগ্ন অরক্ষিত রেলগেট অতিক্রম করছিল খেয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। এ সময় সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই বাসটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে, রেললাইনে ছিটকে পড়ে বাসযাত্রীদের শরীর।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ২৫ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১০ জন মারা যান। নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ জনে। আহত হন অন্তত ৩০ জন। সেদিন আক্কেলপুর কলেজ মাঠে একসঙ্গে ১১ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আক্কেলপুর পৌরসভা সাত দিনের শোক ঘোষণা করে, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান কালো পতাকা উত্তোলন করে।

সেদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। পশ্চিম আমুট্ট গ্রামের আব্দুল হামিদ ভাসানী অফিসিয়াল কাজে জয়পুরহাট জেলা শহরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার আট বছর বয়সি নাতি সোহান বায়না করে সেও তার সঙ্গে যাবে। নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আক্কেলপুর বাজার রেল গেটে এসে জয়পুরহাটগামী খেয়া পরিবহণ বাসে ওঠেন। ট্রেনটি যখন ধাক্কা দেয় ভাসানী তখন জানালা দিয়ে নাতি সোহানকে বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিলেও নিজে বাঁচতে পারেননি।

সেই দিনের বিভীষিকাময় স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি বেঁচে যাওয়া অনেকে। সেই ছোট্ট সোহান এখন ২৭ বছরের যুবক। সেদিনের সেই ভয়ংকর দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। আবেগাপ্লুত হয়ে চোখে জল এনে সেই দিনের ভয়াল তিনি স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

জানা গেছে, সেদিন দুর্ঘটনাস্থলেই নিহত হন ২৫ জন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। তাদের অনেকেই পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫। ওইদিন বিকালে আক্কেলপুর কলেজ মাঠে একসঙ্গে ১১ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আক্কেলপুর পৌরসভায় ৭ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন হয় বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

আজ ১৯ বছর পর, সেই দিনটির কথা হয়ত অনেকেই ভুলে গেছেন। কিন্তু নিহতদের পরিবার এখনো বয়ে চলেছেন বেদনার ভার। প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে তারা কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করে স্মরণ করেন হারানো স্বজনদের। নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর ১১ জুলাই স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলাদ মাহফিল ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। তবে সরকারিভাবে এই দিনটিকে স্মরণ করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার স্থানে আজও কোনো স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হয়নি, যা নিয়ে রয়েছে হতাহত পরিবারগুলোর ক্ষোভ।

তাদের প্রশ্ন, এই শোক ইতিহাসের পাতায় থাকবে না? আমাদের কান্না কে দেখবে? ১৯ বছর পরও সেই কান্না থামেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মশিউর রহমান বলেন, আমি ওই সময় কাছাকাছি ছিলাম। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাসটি। মানুষের কান্না, আর্তনাদ এখনো কানে বাজে। সেই দৃশ্য কোনোদিন ভুলতে পারবো না। স্বজনদের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। অনেক তরুণ-তরুণীর নিথর দেহ দেখে মনটা আজও কেঁদে উঠে। আমি নিজ হাতে ৮ থেকে ১০টি মরদেহ উদ্ধার করেছিলাম। সেই রাত আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ও দুঃসহ রাত ছিল।

সেদিনের আট বছরের ছোট্ট সোহান এখন পরিণত যুবক। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, দাদুর সঙ্গে বায়না ধরে বাসে জয়পুরহাট যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ট্রেনের ধাক্কায় দাদু আমাকে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়ে নিজে মারা যান। আমিও মাথায় ও হাতে গুরুতর আঘাত পেয়ে অজ্ঞান ছিলাম পড়ে হাসপাতালে নিজেকে আবিষ্কার করি। কিন্তু সেদিন দাদুকে চিরতরে হারিয়েছি। এখনো ভয় আতঙ্ক আমাকে তাড়া করে।

সেদিন পৌর এলাকার শান্তা গ্রামের একই পরিবারের বাবা ও দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হন। নিহতের ভাই মোর্শেদ বলেন, ওই বাসে আমার আমার বাবাসহ দুই ভাই জয়পুরহাট যাচ্ছিলেন। আমি একসঙ্গে বাবা ও ভাই হারিয়ে শোকে পাথরের মতো হয়েছিলাম। বাবা ও ভাই হারানো শোক ১৯ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। এখন সেখানে স্থায়ী গেট ও গেটম্যান থাকলেও কোনো স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। আমাদের কান্না এখনো থামেনি।

আক্কেলপুর রেল স্টেশন মাস্টার হাসিবুল আলম বলেন, সেই সময় রেল ক্রসিংটি অরক্ষিত ছিল। কোনো গেটম্যানও ছিল না। দুর্ঘটনার পর সেখানে স্থায়ী গেট নির্মাণ করা হয়েছে। গেটম্যানও সরকারিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে রেল ক্রসিংটি দিয়ে নিরাপদে যানবাহন চলাচল করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, ২০০৬ সালের ১১ জুলাইয়ের দুর্ঘটনা খুবই মর্মান্তিক ছিল। যেটা আক্কেলপুরের ইতিহাসে প্রথম ট্র্যাজেডির ঘটনা। ওই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেখানে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close