বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলছে ধর্ষণের ঘটনা। এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের পৃথক দুটি স্থানে ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেইসঙ্গে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে নাগরিক সমাজে। সেইসঙ্গে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
গত শুক্রবার কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ এবং শনিবার সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মুরাদনগরের ঘটনার আলোচনা-সমালোচনার ও বিতর্কের মধ্যে মঙ্গলবার ভোলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ আসে। ভোলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী জানান, তার স্বামীকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য ডেকে নেওয়ার পর তাকে নির্যাতন করেন।
এর আগে কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারীকে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মারধর করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী নারীকে পরিবারের সামনে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হয়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারটি এলাকা ছেড়ে যায়ণ
কুমিল্লার মুরাদনগরের পরিবারটি সঙ্গে দেখা করেছিলেন হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের কনভেনর লাকী বাছাড়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পেলাম, সেটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং ঘটনাটা আমাদের সংখ্যালঘুদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আরো পড়ে যাচ্ছি দিনে দিনে।’ তিনি আরো বলেন, কুমিল্লায় এ বছর মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে অন্তত ১২টি ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়া পাঁচই আগস্টের পর থেকে ৩০০টি ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, ‘দিনে দিনে ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে এবং রিসেন্টলি আপনারা হয়তো দেখতে পাচ্ছেন যে, অনেক মা-বোনদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোর সঠিক কারণটা আমরা জানি না যে ওনাদের এই লাশগুলো কী কারণে বা তাদের মৃত্যুর কারণটা কী?’
মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, ‘আমরা যারা হিউম্যান রাইটস নিয়ে কাজ করি, আমরা যারা এতদিন ধরে রুল অব ল, আইনের শাসনের কথা বলি, পরিবর্তনটা চাচ্ছিলাম। আমরা কিন্তু ছাত্রদের সঙ্গে ছিলাম। কারণ বিচারহীনতা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছিল আগের সরকারের সময়। যার জন্য আমরা পরিবর্তন চাচ্ছিলাম। এখন তো আরো ভয়াবহ অবস্থা।’
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের ছয় মাসে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেই সংখ্যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া গত ছয় মাসে দেড়শর বেশি ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, ২০২৪ সালে মোট ৪০১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর এ বছর ছয় মাসের মধ্যেই এ সংখ্যা ৪৪১টি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১১ মাসে সহিংসতা ও ধর্ষণের ৭৮০টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৫৮টি ঘটনা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘খুবই উদ্বেগজনক ধর্ষণের চিত্র, নারী নির্যাতনের চিত্র। সার্বিকভাবে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন সার্বিকভাবে বেড়ে চলছে এবং উদ্বেগজনভাবে রাষ্ট্র দায়িত্ব নিচ্ছে না। আমাদের উদ্বেগটা এটাই। রাষ্ট্র ঝাঁপিয়ে পড়ছে না।’ তিনি বলেন, আগস্টপরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। এ ছাড়া মব এবং কট্টর চিন্তাধারায় নারীকে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
সালমা আলী বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা কোনো হিংস্র একটা জঙ্গলে বাস করছি। আমরা দেখতে চাই, সরকার কীভাবে অ্যাড্রেস করছে। পলিটিক্যাল পার্টি বা যারা ভোট চান, তাদের কাছ থেকে শুনতে চাই, তারা কীভাবে এই জায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করবে।’
কেকে/ এমএস