জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আজকের এই দিনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। হাসিনা উৎখাত হয়েছে, পতনও হয়েছে কিন্তু নতুন দেশ এখনো গঠন হয়নি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ৩টায় গাইবান্ধা শহরের পৌর শহিদ মিনার চত্বরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ একটি যৌক্তিক আন্দোলনে নেমে এসেছিল। সেই আন্দোলনে যখন খুনি হাসিনা সরকার পুলিশ এবং ছাত্রলীগ দিয়ে দমন নিপীড়ন চালায়, ছাত্র সাধারণ জনগণের ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। তখন ছাত্র-শ্রমিক সাধারণ জনগণ সবাই এক দফার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল।
আমরা বলতে চাই, এই গণ-অভ্যুথানে হাজারো মানুষ শহিদ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে। একটা নতুন বাংলাদেশের জন্য। এই বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে। সেই বাংলাদেশে কথা বলতে গেলে, পুলিশ আপনার ওপর গুলি চালাবে না। আপনি কথা বলতে চাইলে প্রতিবাদ করতে চাইলে প্রতিবাদ করবেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেই প্রতিবাদ শিখিয়েছে আমাদের।
আমরা যেন প্রতিবাদ থেকে সরে না আসি। আপনাদের যে অধিকার, এলাকার সমস্যা, সেগুলো আপনারা নির্ভয়ে কথা বলবেন। আমাদের ভয় কিন্তু ২০২৪ সালে ভেঙে গেছে। নতুন করে কোনো ভয়ের সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে হতে দেব না।
তিনি আরো বলেন, শহিদেরা রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজনে আমরা আবারো নিজের রক্ত দেব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পথেই এই বাংলাদেশকে চলতে হবে। আমরা জানি, গাইবান্ধা দরিদ্র জেলাগুলার মধ্যে অন্যতম। নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার এই গাইবান্ধাবাসী।
আমরা আপনাদের জন্য কাজ করতে চাই। আমরা একটি নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়ে এবার রাজপথে নেমেছি। ২০২৪ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। শেখ হাসিনা উৎখাত হয়েছে, পতনও হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ এখনো গঠন হয়নি। এই নতুন দেশ গড়ার জন্য এখন আমরা রাজপথে নেমেছি।
তিনি বলেন, আমরা গাইবান্ধা দিয়েই শুরু করেছি। যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, তাদের অধিকার এখনও আদায় হয়নি। তাদের কথাও আমরা প্রথমে বলতেছি। আমরা ৬৪ জেলায় পদযাত্রা করব এবং ৬৪ জেলার মানুষের কথা শুনে আমরা জুলাইয়ের ইশতেহার ও জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র আমরা এই সরকারের কাছে আদায় করব। সেই ঘোষণাপত্রে আপনার আমার অধিকারের কথা লেখা থাকবে। আপনার আমার দায়িত্বের কথা লেখা থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের নাগরিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলে। আজকের এ সমাবেশেও দলিত হরিজন নানা ধর্মের নানা বর্ণের মানুষ এখানে এসেছেন, আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনারা আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে থাকতে পারি, আপনার আমার মধ্যে যদি সে আত্মার সম্পর্ক থাকে, ইনশাল্লাহ আমরা যেজন্য আপনারা রাজপথে নেমেছিলেন, আমরা যেজন্য রাজপথে নেমেছিলাম, সেই স্বপ্ন আমাদের এখনো তাড়া করে। সেই নতুন বাংলাদেশ এই বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, মানুষের মর্যাদার বাংলাদেশ আমরা আদায় করতে পারব।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা হামলা করেছিল, গুলি চালিয়েছিল, সেই ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে। দেশের বাইরে ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে দেশের বিরুদ্ধে।
আমরা বলব, জুলাই গণ-হত্যাসহ গত ১৬ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে, খুনি হাসিনা ও এ আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, তাদের বিচার অবশ্যই এই বাংলার মাটিতেই হতে হবে। তাদের বিচার অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য যে সংস্কার, রাষ্ট্রের সমমৌলিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে। শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য, একদলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয় নাই। কেউ গণ-অভ্যুত্থান করে নাই। নতুন বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজি দুর্নীতি লুটপাট দখলদারত্বের আর কোনো সুযোগ দেব না। ইনশাল্লাহ আমরা আপনারা একসঙ্গে যে দেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে আমরা আবার ঘরে ফিরব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ।
এর আগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে দুপুর ২টার দিকে সাদুল্লাপুর উপজেলা সদরে পদযাত্রা করে। পদযাত্রা শেষে তারা গাইবান্ধায় আসেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
কেকে/এএস