বান্দরবানের লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আতাত, স্পট নিলামের নামে সরকারকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছে লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী, আমতলী পাড়া, ডিগ্রীখোলা, ধূইল্যাপাড়া, কম্পনিয়া এলাকার লোকজন। অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়,লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী, আমতলী পাড়া, ডিগ্রীখোলা, ধূইল্যাপাড়া, কম্পনিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ২৭ জনের স্বাক্ষরিত এক অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। যথাক্রমে লোহাগাড়া উপজেলার দক্ষিণ সুখছড়ি গ্রামের মো. আবদুল আজিজের ছেলে দিদারুল ইসলাম জিসান গং, লামার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী আমতলী এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন মেম্বারের ছেলে মো. আবুল হোসেন গং এবং লামার সরই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি ও ইউপি মেম্বার নাছির উদ্দিন গং মিলে চাম্বী মৌজার মুসলিম পাড়ায় ডলুখাল হতে ২টি স্পটে অবৈধভাবে প্রায় ৮ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে। প্রায় ৪ বছর পূর্বে এই বালুগুলো পাচার করার জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছিল। পরিবেশ অধিদদফরের বাঁধার কারণে বালুগুলো পাচার করা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসিরা জানান, আওয়ামী লীগ নেতারা লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিনের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধভাবে উত্তেলিত এই সকল বালুগুলো নামমাত্র মূল্যে স্পট নিলাম দেখায়। স্পট নিলামে বালুর প্রকৃত পরিমাণ উল্লেখ করে নিলাম দেওয়া হয়নি। ২টি স্পটে ৮ লক্ষাধিক ঘনফুট বালু মজুদ থাকলেও স্পট নিলামে বালুর পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র দেড় লাখ ঘনফুট। একটি সমঝোতার মাধ্যমে বালুর প্রকৃত পরিমাণ কমিয়ে স্পট নিলাম দেওয়া হয়েছে।
স্পট নিলামের ফলে এই এলাকায় অবাধে বালু পাচার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু পাচারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বালু পাচারকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। স্পট নিলামের নামে নামমাত্র মূল্যে ৮ লক্ষাধিক ঘনফুট বালু আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে দেওয়ায় সরকার প্রায় ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে ও গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব পালনে সরকারের কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ ইচ্ছেমতো কাজ করছে এই কর্মকর্তা।
উম্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে এই বালুগুলো বিক্রয় করার মৌখিক আবেদন জানানোর পরও তিনি আমাদের আবেদন আমলে নেয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয়রা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের অনুরোধ করে।
লামা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, বালু নিলামের কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন বেড়েছে। বর্তমানে লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৪০টির অধিকস্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত লোড নিয়ে অবৈধ বালুর পরিবহনে গ্রামীণ অবকাঠামো, ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে দুইটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। আরো তিনটি ব্রিজ ধসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে নেই কোনো অভিযান।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজ শামীম আরা রিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, দুদকে করা অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন বলেন, আমি শুনেছি তবে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
কেকে/এআর