জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী, কমনওয়েলথের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের প্রশাসনিক ভবনে জিম্মি করে রেখে অটোরিকশা চালুর দাবিতে ভবনের প্রধান গেইটে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করেছে কিছু শিক্ষার্থী।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন। এসময় স্নাতক ১ম বর্ষে ভর্তি হতে আসা শতাধিক শিক্ষার্থী, কমনওয়েলথের এশিয়া সুশাসন ও শান্তি বিষয়ক প্রধান মিশেল স্কোবি এবং কয়েকজন সাংবাদিককে ভেতরে আটকে রাখেন তারা।
আন্দোলনের ফলে বিপাকে পড়েন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সর্বশেষ সময় বিকেল সাড়ে তিনটা কিন্তু ভবনের ভেতরেই তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং বাহির থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। অভিভাবকসহ অনেকেই কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়াও ভেতরে থাকা কমনওয়েলথ প্রতিনিধি মিশেল স্কোবি প্রচন্ড গরমে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন বলেও জানা গেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন ভবনের ভেতরে ঢুকতে চেয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ করেন, তখন তারাও রোষানলে পড়েন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন তাদের দিকেও চড়াও হন। এক পর্যায়ে প্রবল চাপের মুখে তারা তালা খুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এর আগে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্বাশত প্রামাণিক তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমাদের দাবিতে একমত না হলে জাকসুও আটকে যাবে।’ তিনি আন্দোলনের জন্য সবাইকে দুপুর সাড়ে বারোটায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান।
ভবনের ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার যিনি খুলনা থেকে ভর্তি হতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করতে আসিনি। শুধু ভর্তি হতে এসেছি। অথচ আমাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। তালা খুলতে বলায় বাজে ব্যবহার করেছে কয়েকজন।’
ভবনের ভিতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম ভিতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে কমনওয়েলথের অতিথি ও সাংবাদিকদের বের করে দেওয়ার দাবি জানালেও বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারতে তেড়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আকিব সুলতান বলেন, ‘সাংবাদিকদের বের হওয়ার অনুরোধে আন্দোলনকারীরা রেগে যান, এমনকি তাদের মারতে পর্যন্ত তেড়ে আসেন। এটা খুবই দুঃখজনক ও ন্যাক্কারজনক আচরণ।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছে। আমরা তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেছি। সেই আবেদন পর্যালোচনা করে সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়ে ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএস