শব্দের চেয়ে বেশি হলে সুপারসোনিক আর শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ গতিসম্পন্ন হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র। শনাক্ত অসম্ভব ইরানের সবশেষ সংযোজন এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে আছে ইসরায়েল। তবে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র খুব বেশি ছোড়েনি ইরান। তবে ইরান তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিতে শুরু করেছে। গতকাল তারা ইসরায়েলের বিমানবন্দরে হামলা করেছে, তেহরানে ভূপাতিত করেছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। অন্যদিকে ইসরায়েলও থেমে নেই, গতকালও তারা তেহরানে বেশ কয়েকটি আক্রমণে সফল হয়েছে। ইসরায়েল সেন্টিফিউজ ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা করেছে, বোমা ফেলেছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
ফাত্তাহ-১ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান : ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বলছে, তারা গত রাতে ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করেছে। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ইরান যখন ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, তখনো তারা বেশ কয়েকটি ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তবে চলমান সংঘাতে ইরান সম্ভবত এই প্রথম ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল।
২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।
আইআরজিসি এ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল : ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’
আইআরজিসি ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘হাইপারসনিক’ হিসেবে দাবি করলেও সামরিক বিশ্লেষকরা এর প্রকৃত হাইপারসনিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক সময় বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাড়া দেওয়ার আগেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে।
অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে এমন গতিতে আঘাত হানতে পারে যে, বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে পারে না। এমনকি সাড়া দেওয়ার আগেই তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে দিকও পরিবর্তন করতে পারে।
ইসরায়েলের বিমান ঘাঁটিতেও হামলা করেছে ইরান : রেভল্যুশনারি গার্ড ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাগুলো বিশেষভাবে ইসরায়েলের সেসব বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, যেখান থেকে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের হামলা নিরবচ্ছিন্ন, জটিল, বহুস্তরবিশিষ্ট এবং ধাপে ধাপে চলতে থাকবে। আমরা সেই বিমানঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছি, যেখান থেকে ইহুদিরা ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছিল।’ এর আগে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছিল, ইরান মঙ্গলবার দশম ধাপে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করেছে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি ইরানের :
ইসরায়েলি বাহিনীর একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ইরানের রাজধানীর কাছে ভূপাতিত করা হয়েছে। রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইরানের ভারামিন শহরের গভর্নর হোসেইন আব্বাসি গতকাল বুধবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, গভর্নর হোসেইন আব্বাসি বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের এ সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমানটি ভূপাতিত করে।
গত শুক্রবার ভোরে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকে এ নিয়ে ইসরায়েলের মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান।
এফ-৩৫ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। এটি রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। এর একাধিক সংস্করণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এটি ব্যবহার করে।
ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা : ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা ৫০ টির বেশি যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রসহ একাধিক অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা নির্দেশনার ভিত্তিতে এ হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা বরাবর অস্বীকার করে এসেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কেন্দ্রটিকে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-সম্পর্কিত অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। গত বছরের অক্টোবরেও এটি ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
এ ছাড়া ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তেহরানের এ বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধরা হয়।
কেকে/এআর