সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রয়োজনেই পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সৃষ্টি। তবে সৃষ্টিকর্তার দেয়া আশীর্বাদকে যেন অবহেলা করছে মানুষ। প্রতিনিয়তই তাদের কর্মকান্ডের দ্বারা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর দরূণ ভুমিক্ষয়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, গ্রীণ হাউস প্রভাবে বাসের অযোগ্য হয়ে পরছে আমাদের এই ধরণী।
আজ ৫ই জুন–বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ নিয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিনে পালিত হয় দিবসটি। ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনি সময়’- এ স্লোগানে পালিত হবে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫।
প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতির আরেকটি কারণ। তাই এই প্লাস্টিক দূষণ কমানো এখন সময়ের দাবি।
পরিবেশ রক্ষায় আমরা এখনই সচেতন না হলে পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী দিয়ে যেতে পারব না আমরা!
ব্যাক্তিপর্যায় থেকেই পরিবেশের জন্য কাজ করা আবশ্যক। তবে পরিবেশ রক্ষায় সাংগঠনিক কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এমন অনেক পরিবেশবাদী সংগঠন আছে যারা বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এমন কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। চলুন আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ নিয়ে কি ভাবছে সেই সংগঠনগুলো জেনে নেই।
ছোট কাজে বড় পরিবর্তন
বিশ্ব পরিবেশ দিবস কেবল একটি দিন নয়, বরং আমাদের কাছে এটি একটি বার্তা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসার, রক্ষার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে তোলার প্রতিশ্রুতি। আমরা 'অভয়ারণ্য' বিশ্বাস করি, পরিবেশ রক্ষা কোনো একক কাজ নয়, এটি একটি সম্মিলিত চেতনার ফল।
তরুণরাই পারে সমাজে পরিবেশ সচেতনতার আগুন ছড়িয়ে দিতে, এবং আমরা সেই অগ্নিসঞ্চারেই কাজ করে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে গাছ লাগানো হোক কিংবা প্লাস্টিকের বিনিময়ে গাছ দেয়া হোক অথবা পাখিদের জন্য আবাসস্থল ও খাবারের ব্যাবস্থা করা হোক; আমরা ছোট ছোট কাজ দিয়েই বড় স্বপ্ন দেখি।
এ পরিবেশ দিবসে আমরা মনে করি, শুধু স্লোগান নয়, প্রয়োজন বাস্তব উদ্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না, এগিয়ে গিয়ে সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। অভয়ারণ্য সেই পথেই হাঁটে তরুণদের নিয়ে, সংস্কৃতি আর পরিবেশকে একসূত্রে গেঁথে।
আমাদের স্বপ্ন একটিই সবুজে ঘেরা, প্রাণে ভরা, টেকসই এক বাংলাদেশ। সেই স্বপ্নের পথচলায় আমরা সবাইকে পাশে চাই।
নাঈমুল ফারাবি
সভাপতি,
অভয়ারণ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই
পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো একে অন্যের সাথে এতোটাই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত যে একটি উপাদানের ক্ষতিসাধন ক্রমান্বয়ে গোটা পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এই সমন্বিত ব্যবস্থাকে সঠিকরূপে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে একক নয়, বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হোক এবারের পরিবেশ দিবসের অঙ্গীকার।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন ‘তারুণ্য’ সূচনালগ্ন থেকে প্রতিবছরই ক্যাম্পাসের ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে থাকে। সেই সাথে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চালিয়ে থাকে সংগঠনটি। তারুণ্য মনে করে পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন কার্যকর পরিবেশবাদী উদ্যোগ ও দায়িত্ববোধ। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এই পরিবেশ দিবসের মাধ্যমে পরিবেশের প্রতি আমরা আরেকটু দায়িত্বশীল হয়ে উঠি। আসুন, আমি আমার জায়গায় সচেতন থেকে, সচেতনতা ছড়িয়ে দিই সকলের মাঝে।
ফাবিহা বুশরা
সাধারণ সম্পাদক,
তারুণ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস হোক পলিব্যাগ মুক্ত
‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস। অথচ আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও প্লাস্টিক দূষণ নীরব ঘাতকের মতো প্রতিনিয়ত পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে চলেছে।
বাজার করার সময় বহন করা পলিব্যাগ, পিকনিকে ব্যবহৃত ওয়ান-টাইম প্লেট বা গ্লাস এসবই হচ্ছে আমাদের ক্যাম্পাসের প্লাস্টিক দূষণের মূল উৎস। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা বেশিরভাগ প্লাস্টিকই পরবর্তীতে আর বের হয় না। মাটির নিচে জমে থেকে তা গাছের শিকড়ের স্বাভাবিক বিস্তারে বাঁধা সৃষ্টি করে, মাটিতে পানি ও বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়।
এছাড়া, এসব প্লাস্টিক দীর্ঘদিন পরে ক্ষয়ে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপ নেয় যা প্রাণিজগতের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে। এতে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে। কুকুর, বিড়াল এমনকি ক্যাম্পাসের আশেপাশের বন্যপ্রাণীরাও খাবার ভেবে পলিথিন খেয়ে ফেলে এবং অনেক সময় প্রাণ হারায়। এমনকি প্লাস্টিক পোড়ালে যে বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায় তা বাতাসকে করে তোলে ভয়াবহভাবে দূষিত, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রেও প্রভাব ফেলে।
জলাবদ্ধতা, মশার প্রজনন, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বৃদ্ধির জন্যও দায়ী এই প্লাস্টিক। অথচ সামান্য সচেতনতায়ই এই বিপদ ঠেকানো সম্ভব।
যদি আমরা বাজারে যাওয়ার সময় নিজস্ব ব্যাগ ব্যবহার করি, পিকনিকে ওয়ান-টাইম প্লেটের বদলে পুনঃব্যবহারযোগ্য গ্লাস, প্লেট নিই, তাহলে আমাদের ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে আরও পরিচ্ছন্ন, প্রাণবন্ত এবং পরিবেশবান্ধব।
পরিবেশ শুধু মানুষের জন্য নয়, এটি সব প্রাণীর জন্য। সাপ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পতঙ্গ পর্যন্ত প্রতিটি জীবই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মও প্রকৃতি ও প্রাণীর সঙ্গে সদাচরণ করা এবং পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখার ব্যাপারে গুরত্ব দেয়া হয়েছে।
আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক ‘ক্যাম্পাস হবে পলিব্যাগমুক্ত, প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপদ আশ্রয়স্থল’।
মো. ছাফওয়ানুর রহমান,
সাধারণ সম্পাদক, ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
ক্যাম্পাস হোক সকল প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল
মানুষের নানা কর্মকান্ডের ফলে আজ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন। মানুষ তার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত নির্বিচারে পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে। নদী শাসন, বন উজার যেন নিত্যদিনের ঘটনা। নেই পরিবেশের পরিচর্যা, নেই যত্ন। মানুষ তার প্রয়োজনে এই পৃথিবীটাকে করে তুলছে বসবাসের অযোগ্য। তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা এই ১৭৫ একরের সবুজ যেন আজ ম্রিয়মান। ক্যাম্পাসে পূর্বের তূলনায় গাছের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। উপরন্তু ক্যাম্পাসের যত্রতত্র দেখা যায় ময়লার স্তুপ। 'পার্থেনিয়াম' নামক বিষাক্ত উদ্ভিদে ছেয়ে আছে ক্যাম্পাস, নেই পরিচর্যা। গাছ কেটে, পাখিদের আবাসস্থল নষ্ট, লেকের পরিচর্যা না থাকায় জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর নেই সঠিক আবাসস্থল। পরিবেশের রক্ষা করা মানে, পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা। প্রতিটি উপাদানের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করা। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাই আমাদের অঙ্গীকার হোক, প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ক্যাম্পাস তৈরি করা। সম্মিলিত ভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশের বিপর্যয় রুখে দেয়া ছাড়া এর বিকল্প নেই।
ফারহানা ইয়াসমিন
স্নেক রেস্কিউ টিম বাংলাদেশ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
জলবায়ুর প্রতিশোধে হার মানবে সভ্যতা!
কভিড-১৯ এর টিকা আবিস্কার হয়েছে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের টিকা কে আবিস্কার করবে? একদম বিতর্কের উর্ধ্বে গিয়ে যদি বলেন এই মুহূর্তে বা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি, নিশ্চিত চোখ বুজে উত্তর আসবে জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় আমরা কি পরিবেশ বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে পারছি? আর পরিবেশ দিবস কি শুধুই ৫ই জুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ। পৃথিবীকে রক্ষা, এই সভ্যতাকে রক্ষা ও আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য হলেও আসু পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার কোনো বিকল্প নেই।
পরিবেশ দূষিত হয়ে গেলে ধ্বংস হবে সমগ্র সভ্যতা। শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জেরে গোটা বিশ্বজুড়েই পরিবেশের এক ভয়াবহ অব্স্থা। যে ভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রের উচ্চতা বারছে এতে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এক সময় তলিয়ে যাবে, ভূগর্ভে সঞ্চিত পনি ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ তলানিতে এসে ঠেকেছে , তাতে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার সামনে যে বিশাল সংকট এসে উপস্থিত হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এসব কিছু দিশাহারা করে তুলছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
করোনা ভাইরাসকে অনেকে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের থেকেও ভয়ংকর বলেছে তবে করোনা ভাইরাস ও একটা সময় মানুষের কাছে হার মেনেছে, কিন্তু পরিবেশ যখন প্রতিশোধ নিবে তখন পরিবেশকে আমরা হার মানাতে পারবো না বরং আমরাই হার মানবো। তাই সকলই আজ থেকে, এখন থেকে সচেতন হই।
পরিবেশ রক্ষায় আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় পরিবেশ শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ ও বৃক্ষ নিধন রোধ করে বৃক্ষরোপণ করতে হবে, সবুজ অর্থনীতি, সবুজ শিল্পায়ন ও সবুজ অভ্যাস গরে তুলতে হবে।
‘পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী, বাঁচবে বাংলাদেশ, বাঁচবেন আপনি ও আপনার পরিবার’
আবদুল্লাহ আল নোমান
প্রতিষ্ঠাতা,
নিসর্গজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
কেকে/ এমএস