পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কুরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ জবাই করা হয়, যা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এসব পশুর মাংস প্রস্তুতে প্রয়োজন পড়ে দা, বঁটি, ছুরি, ধামা, চাপাতিসহ নানা ধরনের ধারালো ধাতব সরঞ্জাম। ফলে পবিত্র ঈদুল আজাহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরি কাজে কামার পল্লীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশালায়। তারা দিন-রাত ঘুমকে হারাম করে পরিশ্রম করছে। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মাংস কাটার নানা ধরনের ধারালো ধাতব সরঞ্জাম তৈরি করে থাকে।
সরেজমিনে বিভিন্ন কামারশালায় ও বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের শালমারা কামারপাড়া এলাকায় প্রান্তিক জনগাষ্ঠীর ৫০টি পরিবার দির্ঘদিন থেকে বসবাস করছে। একমাত্র কামারি কাজ কর তাদের পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তারা দির্ঘদিন থেকে এই পেশায় নিয়োজিত থেকে দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে থাকে।
কামারশালাগুলোতে এখন টুংটাং শব্দে মুখর পরিবেশ। কয়লার চুলায় জ্বলছে আগুন, কামাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। কামার পল্লীতে তারা লোহা পুড়ে গরম লাল করে হাতুড়ি দ্বারা পিটিয়ে বিভিন্ন প্রকার ধারালো ছুরি, দা, বঁটি ও চাপাতি তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকে। কেউ কেউ সরঞ্জাম তৈরি করছেন, আবার কেউ দোকান বসিয়ে সরাসরি বিক্রি করছেন পশু জবাইয়ের সামগ্রী।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বাহিরে জেলাতে পাইকারি দামে বিক্রি করে থাকে। বিশেষ করে প্রতিবছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় বেশি দামে বিক্রি করতে পরিবার সবাই মিলে ঘুমকে হারাম করে দিনরাত পরিশ্রম করে থাকে। এজন্য কামারিরা ১ মাস আগ থেকে কুরবানির পশুর মাংস কাটতে শত শত ছোট বড় ছুরি, চাপাতি গরু জবাই ও মাংস কাটার জন্য যন্ত্রপাতি মজুদ করে রাখে। তাদের তৈরি করা আর এসব যন্ত্রপাতি কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসত।
কামাররা জানিয়েছেন, সারা বছর কাজের চাপ কম থাকলেও ঈদুল আজহার সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আগের তুলনায় এখন দোকানগুলোতে কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে। উপজেলার ভেলাবাড়ী বাজার এলাকার আল আমিন (৩৫) নামর কামার জানান, দুই যুগ বছর যাবত কামারি কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন। সারা মৌসুম হালকা কাজ করার কারণে কোনো রকম দিনযাপন করে থাকি। বিশেষ করে প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুরবানির পশু জবাই মাংস তৈরি করতে ছোট, বড় চাকু, ছুরি ও চাপাতি তৈরি কর ঢাকা, চিটাগাংগসহ বিভিন জলা পাইকারদের নিকট বিক্রি করতে দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়।
আমার বাবাসহ দুজনে মিলে প্রতিদিন প্রায় ২০টির মতো চাকু ও ছুড়ি তৈরি করা যায় এবং বিক্রি করতে পারল প্রায় ১৩শ টাকার মতো আসে। গত বছর কুরবানির ঈদে দুই সপ্তাহ পরিশ্রম কর এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো আয় করা হয়েছিল। এ বছরও ২ শতাধিক ছুরি-চাপাতি তৈরি করা হয়েছে বাহিরের জেলার পাইকার না আসায় এবার বিক্রির সংখ্যা কম।
কুমড়ীরহাট বাজারে কুরবানির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে আসা মোকছেদুল মমিন (৪২) জানান, বিভিন্ন কামার কারখানা থেকে পশু কাটা জবাই করার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কামারশালায় থেকে পাইকারি দরে কিনে এনে দির্ঘদিন থেকে বিভিন্ন হাট-বাজারের বিক্রি করে থাকি। প্রতিটি হাটে কম বেশি বিক্রি করা হলেও ঈদে বিক্রির সংখ্যা একটু বেশি। ঈদকে সামনে রেখে এ বছর প্রতিটি বড় ছুরি ৭শত টাকা, চাপাতি ৮ শত টাকা, মাঝারি ছুরি ৫ শত টাকা, ছোট ছুরি ২ শত টাকা ও বডি ৬ শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতিবছর কুরবানির এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়ে থাকেন।
কেকে/এএস