বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন, অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার (৩১ মে) লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলা শাখার বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৫ এর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা ১৬ বছর গণতন্ত্র ও সংগ্রামের আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন করিয়েছি যে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেদিকে না গিয়ে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনে দিকে উদ্ভাদিত না হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে কালক্ষেপণ করছে। অথচ তাদের উচিত ছিল একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
তিনি বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কিছু নেতা আওয়ামী লীগের ব্যাজ ধারণ করে অনেক বড় বড় কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াচ্ছে। অথচ কেউ তাদেরকে কোনো দিন রাস্তায় বা মাঠে দেখেনি। যদি নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করেন তাহলে অনির্বাচিত শেখ হাসিনা যেভাবে ক্ষমতায় ছিল জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। হাসিনার মতো একই অবস্থা হবে বলে তিনি জানান।
দুলু বলেন, আপনারা ক্ষমতায় গিয়ে নির্বাচন না দিয়ে সংস্কারের কথা বলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করবেন আবার করিডর দেবেন এটা হতে পারে না। কারণ এটা হলো নির্বাচিত সরকারের কাজ। আপনাদের নয় মাস হয়ে গেছে এখনো নির্বাচনের কোনো খবর নাই।
দুলু আরো বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আগামী ডিসেম্বর মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তাই অতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে আমরা সবাই আন্দোলন করেছিলাম। বিগত ১৬টি বছর এ আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির লাখো নেতাকর্মীর নামে মামলা, হাজার হাজার খুন ও গুম হয়েছে।
বিএনপি হলো একটি গণবান্ধব রাজনৈতিক দল। আমরা সবসময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করি। জনগণ যেটা বলে বিএনপি সেটাই করে। অথচ বাংলাদেশে এমন একটি দল আছে যা ১৫ বছরসহ স্বাধীনতা উত্তর তারা মানুষকে অনেক অন্যায় অত্যাচার করেছে, জুলুম করেছে যা এদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে।
শেখ মুজিবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবরের শাসন আমলে ৭১ সালে কোনো গণতন্ত্র রাখেনি। এক নায়কতন্ত্র শাসন কায়েমের মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করেছিল। চারটি পত্রিকা ব্যতীত সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। তার মেয়ে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে সমস্ত গণতন্ত্র হত্যা করে কবর দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ হলো একটি প্রতারক, মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী দল। সেটা বাংলাদেশের মাটিতে বারবার প্রামাণিত হয়েছে। তারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেন। আজকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারে পতন হয়েছে। সে কারণে শেখ হাসিনা পলায়ন করেছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী কারাবরণ করেছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, আজকে ফ্যাসিস্ট পতনের যে কৃতিত্ব তা কোনো একক রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নয়। দেশে এত গুম, হত্যা ও নির্যাতন হয়েছে, তারপরেও আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ হইনি। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
এর আগে প্রধান অতিথি আদিতমারী উপজেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম পর্বে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি কারণে দ্বি বার্ষিক সম্মেলনে কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়নি। পরবর্তীতে কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
আদিতমারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরুল ইসলাম মানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও আদিতমারী-কালীগঞ্জ আসনের বিএনপির প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুল।
আরো বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মমিনুল হক, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা আফজাল হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু হিয়া ইউনুস, আদিতমারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সালেকুজ্জামান প্রামানিক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, আদিতমারী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইদ্রিস আলীসহ ৮টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিবৃন্দ।
উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৭২টি ওয়ার্ডের মোট ৫৬৮ জন ভোটার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজন তারা হলেন—উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, সদস্য সচিব সালেকুজ্জামান প্রামানিক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি।
সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন হলেন—যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরুল ইসলাম মানিক ও যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে আলম সিদ্দিকী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুইজন হলেন—যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রউফ রুবেল।
কেকে/এএম