জীবনের নানা বাধা পেরিয়ে, ঘাম আর কষ্টের বিনিময়ে, পঞ্চগড়ের ১৪ জন তরুণ আজ তাদের জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সংবাদটি পেলেন—বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার খবর।
তারা কেউ কৃষকের সন্তান, কেউ বা দিনমজুর, আবার কেউ রাত জাগা নৈশ্যপ্রহরীর ঘরের আলো। অথচ আজকের দিনটিতে তারা শুধুই নিয়োগপ্রাপ্ত নয়, তারা হয়ে উঠেছেন হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণের জন্য একটি জীবন্ত অনুপ্রেরণা।
শুক্রবার ( ১৬ মে) সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে, পঞ্চগড় জেলা পুলিশ লাইন্স ড্রিল শেডে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান মুন্সী আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
প্রক্রিয়াটি ছিল কঠিন ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে অংশ নিয়েছিল ১৩৩১ জন প্রার্থী। শারীরিক মাপ ও সক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৩৬১ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯৮ জনের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন ১৪ জন, এবং আরো ৩ জনকে রাখা হয় অপেক্ষমাণ তালিকায়।
এদিকে ফলাফল ঘোষণার সময় প্রার্থীদের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। কেউ বললেন—"আমার বাবা ভ্যান চালান, বাড়িতে খবর দিলে উনি কেঁদে ফেললেন।"
আরেকজন জানান—"বাঁচার একটা রাস্তা পেয়েছি। নিজে দাঁড়ালে পরিবারও দাঁড়াবে।"এ যেন শুধু একটি চাকরি নয়, বরং সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির তরুণদের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
এবিষয়ে কথা হয় নতুন চাকুরি পাওয়া তরুণ আলিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন,আমি নিজের যোগ্যতা ও মেধায় চাকুরী পেলাম আজ৷ আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই৷ সবার কাছে দোয়া চাই আমি যে আমার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারি৷
এদিক সুস্ময় রানা নামে আরেক তরুণ বলেন, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া৷ আমি পুলিশের চাকুরি করবো এটা অনেক স্বপ্ন ছিল৷ আজকে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই৷
চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, “আপনারা এখন পুলিশ পরিবারের সদস্য। সততা, নিষ্ঠা ও দেশসেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের মর্যাদা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকতে হবে।”
এই সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আনোয়ার হোসেন এবং নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহসিন সহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এআর