ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও ফারাক্কা ব্যারাজের বিরূপ প্রভাবে পদ্মা, মহানন্দাসহ দেশের বড় বড় নদীগুলো হারিয়েছে তাদের নাব্যতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল লং মার্চের সমাপ্তি সমাবেশ।
রাজশাহী থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ লং মার্চ শেষে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, ‘পানি আমাদের প্রাপ্য অধিকার, কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’ এই দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছরই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করা হয় সেই প্রতিবাদী ইতিহাসকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করে ১৯৭৫ সালে চালু করে ভারত। এরপর থেকেই ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে দেশটি। এরই প্রতিবাদে লং মার্চের ডাক দেন মওলানা ভাসানী।
মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত লং মার্চের সমাপ্তি সমাবেশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের কৃষক সুলতান আলী বলেন, আগে পদ্মার পাড়ে আমাদের জমিতে তিন ফসল হতো, এখন পানির অভাবে একটাও ঠিকমতো হয় না। নদীতে যদি পানি না পায়, আমরা খাব কি করে?
পাকা এলাকার গৃহবধূ আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েল থেকে পানিও ওঠে না। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আশপাশের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এর একটা স্থায়ী সমাধান চাই।
স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘যে পদ্মা নদী ছিল একসময় এলাকার প্রাণ, এখন সেখানে বালুর চর। সরকারের উচিত নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে পানি অধিকার আদায়ে দৃঢ় কূটনীতি চালানো।
১৯৮৯ সালের ২৫ মে ফারাক্কা ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে কানসাট কলেজ মাঠে লাখো মানুষের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘ফারাক্কা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত বৈষম্যমূলক সব চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন ও বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া। আমাদের উচিত পরিবেশের প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রেখে নদী ব্যবস্থাপনা করা।’
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ বলেন, ৭২ সালে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সময় এসেছে এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলে কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর।
স্থানীয়দের দাবি, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার বুকে এখন শুধু বালু আর চরের রাজত্ব। নদী হারাচ্ছে প্রাণ, কৃষি পড়ছে হুমকিতে। তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বর্তমান সরকার নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।