বিচার না হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার করা হয়। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পরে গত সোমবার দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এবার ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি ওঠে।
দুঃশাসনের মূল সহযাত্রী হিসেবে কাজ করা ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে ‘জুলাই ঐক্য’। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া গণ-অধিকার পরিষদও জাপাসহ ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের নেতারা বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের মূল সহযাত্রী হিসেবে কাজ করা ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি এ রাজনৈতিক শক্তিগুলোও দায়মুক্তি পেতে পারে না। অবিলম্বে এসব দলের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণ এবং বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তারা।
এদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিলসহ জাপা চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিনকে লিখিত চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
গণ-অধিকার পরিষদ জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইভাবে, জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী হিসেবে গণহত্যায় সহায়তা করায় জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করেছে এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল এ শাসনকে সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া পরপর তিনটি একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দলগুলোর বিরুদ্ধে গুম, ক্রসফায়ার, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করাসহ একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী প্রত্যেকটি দলের নিবন্ধন বাতিল করার আহ্বান করছে গণঅধিকার পরিষদ।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাদের-চুন্নুর গ্রেফতার দাবি
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর গ্রেফতার দাবি করেছেন গণ-অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। গত সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি। ওই পোস্টে আবু হানিফ লেখেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার ভেতর গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। তাদের দুজনের নামেই জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলা হয়েছে একাধিক। হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পরও কীভাবে তারা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে, এটা সবচেয়ে অবাক করা বিষয়। প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের বিনিময়ে দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে বিষোদগার করছে। গণহত্যার মামলার আসামিদের আটক না করে এভাবে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়ার দায় এ সরকার এড়াতে পারে না। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার ভেতর জিএম কাদের ও চুন্নুকে আটকের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সোমবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
কেকে/এআর