দেশের রাজনীতির ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য ও অবিস্মরণীয় এক নাম- বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজপথের লড়াই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি রেখেছেন আপোসহীন ভূমিকা। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার সরকার গঠন করেছেন তিনি- ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে। তার দৃঢ় নেতৃত্ব, দূরদর্শী কৌশল ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় বিএনপি জাতীয় রাজনীতির শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয় বরং গণমানুষের অধিকার আদায়ের এক বলিষ্ঠ প্ল্যাটফর্মে রূপ নেয়। দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদদের মতে, খালেদা জিয়া শুধু দলীয় নেত্রী নন, গোটা জাতির রাজনৈতিক আশ্রয়। সংকটকালে তার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল গণমানুষের স্বার্থরক্ষার প্রতীক। তবে আওয়ামী লীগ শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন খালেদা জিয়া। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হন তিনি। বছরের পর বছর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ভুগেছেন; কাটাতে হয়েছে দীর্ঘ গৃহবন্দি জীবন। তবুও তিনি দমে যাননি। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে অব্যাহত রেখেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের। এরপর দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। খালেদা জিয়াও ৫ আগস্টপরবর্তী নতুন বাংলাদেশে ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশে ফিরে বাসায় হেঁটে প্রবেশ করেন। দুই দিন আগে খালেদা জিয়া পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এভাবেই খালেদা জিয়া আবারো রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখতে গেলে খালেদা জিয়ার নাম থাকবে অগ্রগণ্য। তার সংগ্রাম, ত্যাগ ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক খোলা কাগজকে বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা, সম্মান ও মর্যাদা আছে। ফলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে বিএনপি তার এ গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগাতে পারে। এরশাদ আমলে সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে, ভোটাধিকার প্রশ্নে, মানুষের অধিকারের প্রশ্নে তার যে ভূমিকা ছিল; মানুষ এটাকে সম্মান করে। সুতরাং তার শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমি মনে করি, বিগত সময়ের কর্মকাণ্ডে তার যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, তিনি এখনো দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে কিংবা নির্বাচনপরবর্তী কার নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে এগুলো হয়ত পরবর্তীকালে ঠিক হবে। তবে আমি মনে করি- দেশের এখন যে ক্রান্তিকাল, দেশ তো বহুমুখী সংকটে। সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে; যেটা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। এরকম একটা জায়গা থেকেও গতিমুখ দেওয়ার ক্ষেত্রে- মানুষের চিন্তাকে একটা জায়াগায় আনার ব্যাপারেও তিনি বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। এটা বিএনপির প্রজ্ঞা, দূরদর্শীতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেননি। তিনি রাজনীতিতে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। ওনার শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন, ডাক্তারের পরামর্শে তিনি কতটুকু সক্রিয় রাজনীতি করতে পারবেন সেটা ওনার শারিরীক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, এখন ওনার শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে। বাইরে বের হচ্ছেন। তাছাড়া ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। দলের বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেকে/এআর