রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বালুচরে লাউ চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে তিস্তাপাড়ের কৃষকদের। বর্ষায় ভাঙন আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধুধু বালুচর উত্তরের তিস্তার এমন চিত্র যুগের পর যুগ।
এসব প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে বালুচরে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাকের ভাগ্য বদলেছে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের। কয়েক বছর আগেও পরিবার নিয়ে যারা অভাবে দিন কাটাতো এখন তারাই সবজি বীজ উৎপাদন করে স্বচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। লাউ বিক্রয়ের চেয়ে বীজে ৬ থেকে ৭ গুণ বেশি লাভ হয় বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৬শত হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে বীজ লাউ আবাদ হয়েছে। কৃষকরা আবাদকৃত জমিতে বারি লাউ-৪ এবং ক্ষেতলাউসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের লাউ আবাদ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার চর ছালাপাক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা লাউ কেটে ঘোড়ার গাড়ি, ট্রলিতে উঁচু স্থানে নিয়ে যেয়ে স্তূপ করে রাখছেন। আবার কেউবা মাঠেই পরিপক্ব লাউ থেকে বীজ সংগ্রহ করছেন। তাদের সবার মুখে চোখে সচ্ছলতার প্রতিচ্ছবি।
চর ছালাপাকের কৃষক সাজু মিয়া (৬০) বলেন, গত বছর অল্প জমিত লাউ আবাদ করছিলাম। বীজ বিক্রি করে লাভ বেশি হওয়ায় এবছর দুই একর জমিতে লাউ চাষ করেছি। দুই একর জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবছর আশাকরি প্রায় ৮শ কেজি বীজ উৎপাদন হবে। বর্তমান বাজারে তিনশ টাকা কেজি। সব খরচ যেয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
কৃষক মাহাতাব (৪৫) বলেন, এবছর ৬০ শতক জমিত লাউ আবাদ করছি। খালি লাউ বেচাইলে (বিক্রি) লাভ কম হয়। ওই জন্যে হামরা বীজ বেচাই (বিক্রি)। বীজত লাভ বেশি। লাউ পাকলে (পরিপক্ব) বীজ বের (সংগ্রহ) করি একদিন পানিত ভিজি থুয়া (পানিতে রেখে) তারপর রইদোত (রোদ) শুকাই। শুকার পর মুখত দিয়া দেখি যদি কাটাস করি ওঠে তাইলে বুঝমেন যে ভালো করি শুকাইছে। তারপরে বেচাই (বিক্রি)।
বীজ ক্রেতা আলা মিয়া ও ইব্রাহীম বলেন, বর্তমানে বাজার মূল্য কম। ১০ হাজার টাকা মণ কিনতেছি (ক্রয়)। আশা করছি দাম বাড়বে। চর ছালাপাকের কৃষক সাজু, মাহাতাবেই নয় এ চরের প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক বীজ উৎপাদন করছেন। এ চর থেকে লাল তীর, ইস্পাহানি, ব্যাক সিড এর মত কৃষি বীজ কোম্পানিগুলো বীজ সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, এবছর ৩০ হেক্টর জমিতে বীজ লাউ আবাদ হয়েছে। লাউ বীজ উৎপাদনে কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা ভালো দাম পাবে।
কেকে/এএস