ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে ভারতের থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তে অর্ধশতাধিক পুশইন’ এর খবর পাওয়া গেছে।
বিজিবি ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৯ মে) পর্যন্ত মোট ৫৯জনকে ‘পুশইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে স্থানীয়দের মতে এর সংখ্যা আরো বেশি হবে।
বিজিবি ও বড়লেখা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথলি ও নিউ পাল্লাথলি সীমান্ত দিয়ে অনেককে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে বিজিবি ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে। তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৪৪ জনকে বিজিবি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বড়লেখা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু আছে। বিভিন্ন সময়ে তারা ভারতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩০ জনের বাড়ি নড়াইলে। অন্যদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায়।
এ ব্যাপারে ৫২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, আমরা যাচাই-বাছাই করে ৪৪ জনকে বড়লেখা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। তারা বাংলাদেশি। পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে সবাইকে হস্তান্তর করবে। আরো ১০ থেকে ১২ জন আছেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
বড়লেখা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, অনেকের আত্মীয়স্বজন চলে এসেছেন। পুলিশের হেফাজতে থাকা ৪৪ জনের মধ্যে আজ বিকাল পর্যন্ত ৩৫ জনকে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশ ইন) ১৫ জনকে বিজিবি কর্তৃক আটকের দুদিন পর শুক্রবার সকাল ১০টায় শ্রীমঙ্গল ৪৬ বিজিবির দলই ক্যাম্পের দায়িত্বরত সুবেদার নাছির আহমেদ এর নেতৃত্বে বিজিবির একটি দল কমলগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে গত বুধবার ভোরে দলই সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে ‘পুশ ইন’ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পরে তাদের আটক করে বিজিবি সদস্যরা। আটকের পর তাদের দলই সীমান্তের সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে দুদিন রাখা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ১০ জন নড়াইল জেলার, ৩ জন খুলনা জেলার ও ২ জন বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ১৫ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বাংলাদেশের নাগরিক। কয়েক বছর ধরে তারা ভারতের আসামে বসবাস করছিলেন। ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে জেলে পাঠায়। পরে তাদের সীমান্ত এলাকায় নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। পরে বিএসএফ তাদের সীমান্ত দিয়ে গেইট খুলে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ধলই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে আটক ১৫ জনকে বিজিবি অটকের দুদিন পর দুদিন পর থানায় হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
স্থানীয়দের দাবি সীমান্তে শতাধিক পুশ ইন করেছে বিএসএফ এবং ওপার থেকে এই অনুপ্রবেশ ও উচ্ছেদের ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
এমন ঘটনায় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। টহল বাড়ানোর পাশাপাশি বিজিবি ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে চেকপোস্ট বসিয়ে শুরু করেছে কড় নজরদারি। সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশি টহল-নহরদারি বৃদ্ধি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এ কেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন।
কেকে/ এমএস