প্রযুক্তির সংস্পর্শে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে অবিরাম। অনেক কিছুর পাশাপাশি আবিষ্কৃত হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার এখন বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কালের বিবর্তনে সারা দেশের ন্যায় মাগুরার শালিখা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে সন্ধ্যা সাজের সলতে প্রদীপ ল্যাম্প। আবহমান গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় ‘ল্যাম্প বা কুপিবাতি’ এখন বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয়ভাবে সন্ধ্যা সাজের এই ল্যাম্প বা কুপিবাতি, দোয়াত, টেমি, মশাল , ঠুসিসহ নানা নামে পরিচিত। গ্রামীণ জীবনে অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্বন ছিল কুপিবাতি। কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাতে গৃহস্থালির কাজ করতেন গৃহিণীরা। রাস্তায় চলাচলসহ উঠানে কিংবা বারান্দায় অথবা ঘরে পড়াশোনা করত ছেলেমেয়েরা। আর এসকল বাতিগুলো জালানো হতো হাতে পাকানো পাটের সলতে ও কেরোসিন দিয়ে। কুপি বাতির কেরোসিন তেল আনার জন্য প্রতিটি বাড়িতেই ছিল বিশেষ ধরনের কাঁচের বোতল। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আবহমান গ্রামবাংলার কুপিবাতি প্রতিটি ঘরে ঘরে আলো ছড়ালেও আজ তা শুধুই স্মৃতি। অথচ এই কুপিবাতি গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরকে করতো আলোকিত।
অতীতে বিভিন্ন ডিজাইনের ও রঙের এই বাতির মূল্যও ছিল ১ পয়সা থেকে ২ পয়সা আর দোকানে ব্যবহার বড় ধরনের কুপি বাতিগুলোর মূল্য ছিল ২৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা। যা স্বাধীনতার পরবর্তীতে ২৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা এবং সর্বচ্চ ১ থেকে ২ টাকা মূল্য এসে হারিয়ে যায় কুপিবাতি। এগুলো তৈরি হত কাঁচ, মাটি, লোহা আর পিতল দিয়ে। গ্রামবাংলার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কুপিবাতি ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের কুপি পাওয়া যেত- বড় ও ছোট। বেশি আলোর প্রয়োজনে কুপিবাতিগুলো কাঠ এবং মাটির তৈরি গাছা অথবা ট্যান্ডের ওপর রাখা হতো। এই গাছা অথবা ট্যান্ডগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের।
গ্রামবাংলার সেই চিরচেনা প্রয়োজনীয় কুপিবাতি আজ বিলীন হয়ে গেছে বললেই চলে। এ দৃশ্য এখন আর গ্রামীণ সমাজে চোখে পড়ে না। কালের বির্বতনে বর্তমানে কুপি বাতির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, সোলার প্লান্ট, চার্জার লাইট, চার্জার ল্যাম্পসহ আরো অনেক কিছুই। এখন বিদ্যুৎ না থাকলেও গ্রামবাংলার মানুষ ব্যবহার করছে সৌর বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন রকমের চার্জার। অতীতের রাতের অন্ধকারকে দূরে ঠেলে আলো ছড়িয়ে দেবার সেই কুপিবাতি,ল্যাম্প, দোয়াত, মশাল আজ কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীতের স্মৃতি চারণ করে আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ধলা কাজী বলেন, আমাদের সময়ে ল্যাম্প বা কুপিবাতিই ছিল সন্ধ্যার সাজ জালানোর একমাত্র মাধ্যম। এছাড়াও পড়াশোনা, দূরদূরান্তে যাতায়াত, সভা বা উঠান সভায় কুপিবাতি ছিল একমাত্র সঙ্গী।
আধুনিকতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কুপিবাতি সেকালের হলেও ছেঁড়া কাগজের পাতায় লেখা থাকবে কুপিবাতির নাম ও স্মৃতি ফলে নতুন প্রজন্মের শিশুরা জানতে পারবে কুবিবাতি ও তার একাল সেকাল।
কেকে/এএস