চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্প থেকে পলাশ সাহা (৩৭) নামের এক র্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় তার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
পলাশ সাহা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে র্যাব-৭-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। র্যাব-৭-এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলার নিজ কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই সময় তার কক্ষ থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে।
চিরকুটে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না, আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’ পলাশ সাহা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘নিহত পলাশ সাহা নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বাসা নিয়ে থাকতো। বাসায় তার মা এবং স্ত্রী সঙ্গে থাকতো বলে আমরা জেনেছি। কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।’
তবে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা ও মা আরতি সাহা পলাশের সাথে চট্টগ্রামেই থাকতো। তবে পলাশের স্ত্রী মনে নিতে পারেনি মা তাদের সঙ্গে থাকাটা। এজন্য তাদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। সর্বশেষ বুধবার সকালেও স্ত্রীর সঙ্গে মা ও পলাশের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর পলাশ সাহা কর্মস্থল র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে চলে আসেন। সেখানে নিজ অফিসের চেয়ারে বসে নিজের নামে অস্ত্র ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন একটি সুইসাইড নোট।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের জের ধরে তিনি আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট থেকেও এটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাসায় স্ত্রী এবং মা থাকতো। তবে আমরা পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারিনি। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭-এর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘র্যাব-৭ চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণকালে তিনি অস্ত্র ইস্যু করে নিজের অফিস রুমে প্রবেশ করেন। তার কিছুক্ষণ পর একটি শব্দ শুনে কর্তব্যরত অন্য র্যাব সদস্যরা তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়। সেই সময় তার নামে ইস্যুকৃত পিস্তল নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এদিকে চট্টগ্রাম র্যাব কার্যালয়ের এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার বিষয়ে মুখখুলেছেন তার মেজো ভাই নন্দলাল সাহা। নন্দ লাল সাহা বলেন, ২ বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিয়ে হয়। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকে তাদের পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করত। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকত, এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারত না। সে সব সময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ প্রয়োগ করত। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইত না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতো।
তিনি বলেন, বুধবার সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা আরতি সাহা ও ভাই পলাশ সাহার গায়ে হাত তোলে সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।
কেকে/ এমএস