কৃষক যেন কম খরচে ধান কাটতে পারেন, সে জন্য সরকার হাওরাঞ্চল হিসেবে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করে। তবে সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে এসব মেশিন সরবরাহ করলেও মেশিন মালিকরা উপজেলা কৃষি অফিসের নির্দেশনা অমান্য করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে কৃষকদের কাছ থেকে। এবং মেশিন কম থাকায় এর সুফল পাচ্ছে না অনেক কৃষকরা, শ্রমিকের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০২০-২১ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি বিভাগ বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের মাঝে ৩০-৪০ লাখ টাকা মূল্যের বেশকয়েকটি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করেছে। এরমধ্যেই বর্তমানে কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়াও এবছর মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার ৫'শ ৫০ হেক্টর ধান চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের খাককান্দা গ্রামের নুরুল ইসলাম চকে ধান কাটছেন সরকার থেকে ভর্তুকিতে পাওয়া হারভেষ্টার মালিক মনির দারোগা । কানি প্রতি (৩০ শতাংশ) কৃষকদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা নিচ্ছে। উপজেলা পূর্ণবাসন কমিটি প্রতি কানি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, সেই নির্দেশনা মানছেন না হারভেস্টার মেশিনের মালিকরা। তবে শুধু মনির দারোগা নয় উপজেলার অনেক হারভেষ্টার মালিকগণ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
ছলিমাবাদ ও রুপসদী গ্রামের কৃষক ফারুক ও মনসুর আলী বলেন, হারভেস্টার মেশিনের মালিকরা যার কাছ থেকে যত পারে ততই নিচ্ছে। তবে সর্বনিম্ন কানি প্রতি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
কল্যাণপুর,দরিয়াদৌলত ও হোগলাকান্দা গ্রামের কৃষক তারা মিয়া, শাহজাহান ও লিটন বলেন, আমরা জানি কৃষি অফিস কানি প্রতি ২ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিছে, কিন্তু মেশিন মালিকরা এই নির্দেশনা অমান্য করে কানি প্রতি ১ থেকে দেড় হাজার টাক বেশি নিচ্ছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ চাহিদার তুলনায় বাঞ্ছারামপুরে মেশিন কম থাকায় এমন দাম দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মালিক মো. মনির দারোগা গত ২৮ এপ্রিল বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা সামনে মৌখিক ওয়াদা করেছিলেন আমি আর ২ হাজার টাকার বেশী নিব না।
কিন্তু, তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করে যুক্তি দিয়ে বলেন, কৃষক আমাদের সাথে জমির সঠিক শতাংশ বলে না, ৩০ শতাংশকে ২০ বা ২৫ শতাংশ বলে এবং অনেক সময় ৩০ শতাংশ জমি কাটতে হাফ কিলোমিটার দুরে যেতে হচ্ছে। এতে আমার ৫ থেকে ৬ লিটার তেল বেশি লাগে। তাহলে ঐ টাকাটা আমি কইতে আইনা দিমু।
অপর হারভেস্টার মালিক আমজাত বলেন, ২০২১ সালে আমি মেশিনটি পাইছি, ৩ বছর চালানোর পর গতবছর সিজন শেষে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে মেশিনটি অচল অবস্থা পড়ে আছে। তবে এইবছর আমি ব্যক্তিগতভাবে কিস্তির মাধ্যমে দুইটি মেশিন কিনিছি৷ নতুন মেশিনের কোন যন্ত্রপাতি লাগলে নষ্ট মেশিন থেকে খুলে এনে লাগাই। তাতে খরচ বেড়ে যায়।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ভর্তুকিতে দেওয়া হারভেস্টার মালিকদের কানি প্রতি ২ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যদি এখন বেশি টাকা নেয় তাহলে প্রমান পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, আমি গত ২৮ এপ্রিল উপজেলার সকল হারভেষ্টার মালিকদের ঢেকে ও সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে ১কানি প্রতি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেই।তাদের কেউ যদি শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
কেকে/ এমএস