শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫,
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
শিরোনাম: মালয়েশিয়া শ্রমবাজার, সরকারের আশ্বাসেও শঙ্কা      মোহাম্মদপুরে ফের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব       মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু নিয়ে সুখবর      দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন ঘোষণা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়       নগরভবনের সব গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা      এবার পালা জাপার      রাতভর অবস্থানের পর আবারো জড়ো হচ্ছেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মালয়েশিয়া শ্রমবাজার, সরকারের আশ্বাসেও শঙ্কা
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে অনিশ্চয়তা ও সংকট চলছিল, তা নিরসনের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। আগামী বছরগুলোতে দেশটি বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মালয়েশিয়া বিনা খরচে অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এই আশ্বাসের মাঝেও শঙ্কা দেখছেন দেশের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। তাদের অভিযোগ, মালয়েশিয়াগামী শ্রমবাজার ঘিরে গড়ে ওঠা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এ সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও তা বাস্তবতা পাবে না।

জানা গেছে, এক বছর বন্ধ থাকার পর শর্তসাপেক্ষে আবারো খুলছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাশুসন ইসমাইল ও মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বৈঠকে শ্রমিক পাঠানো বিষয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, জনশক্তি রফতানিতে যুক্ত যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মানবপাচার ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। একইসঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ নিশ্চিত করে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে। এ ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে সহযোগী এজেন্সি বা ‘অ্যাসোসিয়েট বেয়ারার’ প্রথা বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুযোগ নিয়েছে। ফলে শ্রমবাজারে বাণিজ্যিকীকরণ বেড়েছে। এবার সেই সুযোগ রোধ করতে ব্যয় কমানো এবং প্রতারণা ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের কাছ থেকেও শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৭ হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রথম ধাপে ৭ হাজার ৯২৬ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দেশটি। তারা খুব শিগগিরই মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পাবেন। বৈঠকে মালয়েশিয়া আগামী কয়েক মাসে ১ থেকে দেড় লাখ বিদেশি শ্রমিক নিতে পারে বলেও জানায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে যেন সমান সুযোগ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং তারা শিগগির সিদ্ধান্ত জানাবে। এ ছাড়া মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রদান, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া এবং সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ার গিভার ও স্কিল্ড ওয়ার্কার নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া। প্রধান উপদেষ্টার দিক নির্দেশনা এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি।

রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হলে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে রিক্রুটিং প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার ও শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করলেই শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। কিছু এজেন্সির হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকলে তা দুর্নীতিকে উৎসাহ দেবে, শ্রমিকদের শোষণও বাড়বে। তারা বলেন, সরকারি আশ্বাস বাস্তবায়িত হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন দরজা খুলবে। তবে তা যেন কিছু গোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং দেশের হাজারো রিক্রুটিং এজেন্সি ও লক্ষ শ্রমিকের জন্য হয় এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজর (বায়রা) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সীমিতসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়া হলে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যদি মাত্র কয়েকটি এজেন্সির হাতে শ্রমিক পাঠানোর দায়িত্ব থাকে, তাহলে জনপ্রতি খরচ ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কারণ, যারা সিন্ডিকেটে আছে তারা ১৪ কোটি টাকা দিয়ে কোটা কিনেছে। স্বাভাবিকভাবে তারা সেই বিনিয়োগ তুলতে গিয়ে রেট বাড়িয়ে দেবে।’ তবে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দিলে খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি জানান, যদি সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকার মধ্যেই শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে। 

সিন্ডিকেট ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকার নিজেই বলে সিন্ডিকেট সরকারের চেয়েও শক্তিশালী! অথচ একটি সরকারই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর। সরকার না পারলে কে পারবে? প্রধান উপদেষ্টা তো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি আন্তরিকভাবে চাইলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।’ 
     
বায়রা’র সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে যান, তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তারা যেন যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার পান, ভয়েস তুলে ধরতে পারেন এবং সর্বনিম্ন ভোগান্তিতে অভিবাসনের সুযোগ পান, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো শ্রমিক বিদেশে গিয়ে অনৈতিকতা বা হয়রানির মুখোমুখি হোক। তারা যেন একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান পায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।’

বর্তমান শ্রমবাজারের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে আলী হায়দার বলেন, ‘এ মুহূর্তে শুধু সৌদি আরবের বাজারটি আমাদের জন্য খোলা রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যা ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রতিবছর বাড়ছে। আগে যেখানে বছরে ১১-১২ লাখ লোক বিদেশে পাঠানো হতো, সেখানে এখন সে সংখ্যা কমে গেছে। আমাদের আরো বেশি শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা দরকার।’

তিনি আরো জানান, ‘সৌদি আরব আমাদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য, সেখানে ২,৮০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৮০০-৯০০টি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারছে। সিঙ্গাপুরে মাত্র ৫-৬টি এজেন্সি, জর্ডানে একটি সরকারি লাইসেন্স, মরিশাসে একটি, আর কোরিয়া ও জাপানে সীমিত সংখ্যক এজেন্সি কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এটি তাদের নিজস্ব পলিসির কারণে সীমাবদ্ধ।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত হোক। উপদেষ্টা মহোদয়ও সব এজেন্সির অংশগ্রহণের পক্ষে আবেদন করেছেন। কারণ, দেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো শুরু হওয়া দরকার এটি জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেও গুরুত্বপূর্ণ।’

খরচসংক্রান্ত বিষয়ে আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘সব খরচ মিলিয়ে একজন শ্রমিকের বিদেশ যেতে ব্যয় হওয়া উচিত সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকার নিচে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘শুধু সংখ্যার দিকে নজর না দিয়ে, অভিবাসনের গুণগত মান, শ্রমিকের অধিকার এবং সুষ্ঠু ও নৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

সম্প্রতি ঢাকায় এক মানববন্ধনে বাইরা’র একাধিক সদস্য বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা শ্রমবাজারের স্বচ্ছতা ও সমান সুযোগ চেয়ে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু মালয়েশিয়া যাওয়ার দরজা এখনো মাত্র কয়েকটি এজেন্সির জন্য খোলা। এটা হাজারো বৈধ এজেন্সির সঙ্গে অবিচার।’ তারা দাবি করেন, যে সিন্ডিকেট বিগত সময়ে অস্বাভাবিক খরচে কর্মী পাঠিয়ে শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেই সিন্ডিকেটের হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চালু হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত ২৫টি এজেন্সি নিয়োগের একচেটিয়া সুযোগ পায়, যার ফলে বাকি ১২০০-এর বেশি লাইসেন্সধারী এজেন্সি কার্যত বাইরে থাকে। এতে করে শ্রমিকদের খরচ বাড়ে এবং সেবা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসে না।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  মালয়েশিয়া   শ্রমবাজার   সরকার   আশ্বাস   শঙ্কা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

জুম্মার পর জবি শিক্ষার্থীদের গণ-অনশন
মালয়েশিয়া শ্রমবাজার, সরকারের আশ্বাসেও শঙ্কা
মোহাম্মদপুরে ফের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব
দেশের সার্বভৌমত্ব বর্তমান সরকারের কাছে নিরাপদ নয়: মির্জা আব্বাস
স্লোগান নয়, সেবার রাজনীতি: সহাবস্থানে দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

সর্বাধিক পঠিত

কাউনিয়ায় সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠিত
মতলব উত্তরে আ.লীগ নেতার হামলায় ২ ব্যবসায়ী গুরুতর আহত
স্লোগান নয়, সেবার রাজনীতি: সহাবস্থানে দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবির
কিশোরগঞ্জে স্বামী স্বীকৃতির দাবিতে পারুল রানির অনশন
ডোমারে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close