যশোরের কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্কুলের শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যত্র ক্লাস নিচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। এ কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খেলার মাঠে জলাবদ্ধতায় থই থই করায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে লেখাধুলা থেকে।
শিক্ষা অফিস ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরে ২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কলেজ, ২৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও নদ নদীর উপচে পড়া পানিতে কেশবপুর পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক স্কুলের শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় ক্লাস নিতে হচ্ছে অন্যত্র। বন্যার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, সম্প্রতি জলাবদ্ধতায় তাদের ২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।
এস.এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (সাগরদত্তকাটি) প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন স্কুলের মাঠে জলাবদ্ধতায় পানি জমে থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থী/শিক্ষক কর্মচারিদের বিদ্যালয়ে ঢুকতে ব্যাপক অসুবিধা পড়তে হয়। মাঝেমধ্যে পানিতে এতো পরিমান দুর্গন্ধ হয় যে শ্রেণি কক্ষে বসে ক্লাস করা শিক্ষক/ শিক্ষার্থীদের অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
উপজেলার আলতাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমূল হুদা বাবু বলেন, জলাবদ্ধতার পানি স্কুলের ৪টি শ্রেণি কক্ষে ঢুকে পড়ায় ক্লাস নিতে হচ্ছে অন্যত্র। স্কুলের পাশে একটি ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে।
উপজেলার সুজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা খাতুন বলেন, প্রায় ১ মাস ধরে তার স্কুলের মাঠে পানি জমে রয়েছে। বিদ্যালয়ের টিন সেডের ৪টি শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে গেছে। কোমলমতি শিশুদের নিয়ে পাঠদানে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি স্কুলে খেলার মাঠ উঁচু করণের দাবি জানান।
মধ্যকুল মহিলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কফিল উদ্দীন বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৩টি কক্ষে পানি ঢুকে গেছে। মাদ্রাসার মাঠ পানিতে থই থই করছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রব বলেন, সম্প্রতি ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে গেছে। ১০টি বিদ্যালয়ের মাঠ প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, উপজেলার ২৫টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা প্লাবিত হয়েছে। একই ভাবে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের মাঠও প্লাবিত হয়। যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতায় প্রায় ২৭ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। শতাধিক পরিবার যশোর চুকনগর সড়কের পাশে টং ঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য তিন শত প্যাকেট শুকনো খাবার ও মাত্র ৫ টন চাল পাওয়া গেছে।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার জানান, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য নুরানিয়া স্লুইস গেট হতে বড়েঙ্গা পর্যন্ত নদের এক পাশ দিয়ে নালা করা হচ্ছে। এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে বড়েঙ্গা হতে হরিহর নদের ৪ কিলোমিটার এবং বড়েঙ্গা ত্রিমোহনা হতে আপার ভদ্রার ৩.৭৫ কিলোমিটার খনন কাজ চলমান রয়েছে।
কেকে/এআর