বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি      মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ      ভারতে আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান, অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লির      দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা      জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ       গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব      হাতি সংরক্ষণে প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করতে হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
নির্বাচনের পথে বাধা জামায়াত
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

শুরু হয়ে গেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতির তোড়জোড়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বাড়ছে তৎপরতা, নির্বাচন কমিশনও ইতোমধ্যে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম জোরদার করেছে। চলতি সপ্তাহেই নির্বাচন কর্মপরিকল্পনার চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
 
তবে নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের বক্তব্য ও রাজনৈতিক অবস্থান এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অতিসম্প্রতি পিআরের দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। যদিও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির বিরোধিতা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণ এ ধরনের নির্বাচনি পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত নয়। বাংলাদেশের জন্য পিআর পদ্ধতি উপযোগী নয়। যারা পিআর দাবি করে তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহ থেকে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির জামায়াতের এমন কঠোর অবস্থান আসন্ন নির্বাচনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাঘাত ঘটতে পারে নির্বাচনের পরিবেশে। এমনকি নির্বাচন ভণ্ডুলের শঙ্কাও দেখছেন তারা। 

গত রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, যারা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিরোধী, যারা রাতের ইলেকশনের পক্ষে, তারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা যারা পিআর আর সংস্কার চাই, তারা আবার ঐক্যবদ্ধভাবে এই দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করব। তিনি বলেন, যারা সংস্কারের বিপক্ষে, তারা নির্বাচনের বিপক্ষে। যারা সংস্কারের বিপক্ষে, তারা যেনতেন নির্বাচনের পক্ষে। আপনারা ভাবছেন হাসিনার মতো রাতে ভোট করবেন। এটা হবে না। জনগণ এটা হতে দেবে না। জনগণ এখনো মরে নাই। 

জনগণের জীবনে রক্ত দেওয়া শেষ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জুলাই বিপ্লবের পর, জনগণের আন্দোলনের ফসল হিসেবে যাদের ওপর এ জাতি আস্থা রেখে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, আমরা ভেবেছিলাম তারা কমপক্ষে নতুন যাত্রা শুরু করতে পারবে। ক্ষমতায় বসার পর তারা এখন রাবণে পরিণত হয়েছে। এটা কি তাদের দুর্ভাগ্য নাকি বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য? এটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন। তবে এটা জাতির জন্য বেদনার। আমাদের জীবন দেওয়া, রক্ত দেওয়া শেষ হচ্ছে না। আমাদের বিপ্লবের পর থেকে আবার সংগ্রামের স্লোগান দিতে হয়, রক্ত দেওয়ার ডাক দিতে হয়।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার এর পরে নির্বাচন। আমরা আপনার কথায় আছি। সংস্কারের জন্য আপনি ঐকমত্য কমিশন ঠিক করে দিয়েছেন, আমরা বসেছি বারবার, ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এখন এটা বাস্তবায়ন করা আপনার দায়িত্ব। কিন্তু আপনি বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে দিয়েছেন। এটা ভালো! তারিখের ব্যাপারে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না। আমরা বলি এই সময়টাকে এগিয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ এ করেন। জামায়াতে ইসলামী চায় এই সময়ে নির্বাচন করুক।
 
ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের কোনো অসুবিধা নেই। এপ্রিলে দিলেও কোনো অসুবিধা ছিল না। আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আপনি বলেছেন সংস্কারের পর নির্বাচন, তাহলে এখন সংস্কার নিয়ে টালবাহানা কেন? আমরা কি ৩০ দিন চড়ুইভাতি খেলতে গেয়েছিলাম, এটা কি খেলা ছিল? তাহলে আপনি ঠিক করেন নাই। যে ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে, তা আপনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচনের পূর্বেই। 

পিআর এবং গণভোটের দাবি নিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে গণভোট করেন। পিআর পদ্ধতি ও নির্বাচনের তারিখ নিয়েও গণভোট করেন। জনগণ সব ঠিক করবে, জনগণ যা বলবে, আমরা তা মেনে নেব। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আমাদের বন্ধুরা যখন বলে আমরা ক্ষমতায় গিয়ে এটা-ওটা করব। আমি বলতে চাই, আপনারা যে ক্ষমতা পাবেন এই গ্যারান্টি পেলেন কোথায়, এই গ্যারান্টি তো হাসিনা পেয়েছিল, হাসিনা ভাবত সে ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যাবে। এখানে কিন্তু ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। যেনতেনভাবে ভোট কেটে আরেকটি নির্বাচন হওয়ার গন্ধ পাওয়া যায়।

নির্বাচন নিয়ে সামেন ও ব্র্যাকের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, সামেন নামে একটি সংগঠনের সার্ভেতে দেখা গেছে তারা ৪২ শতাংশ আর আমরা ৩২ শতাংশ। সর্বশেষ ২ সাপ্তাহ আগে ব্র্যাকের একটি সার্ভে হয়েছিল, সেখানে তারা ১২ শতাংশ আর আমরা সাড়ে ১০ শতাংশ। আগে প্রার্থক্য ছিল ১০ শতাংশ, এখন পার্থক্য দেড় পার্সেন্ট। ব্যবধান তো কমছে। আরো ৫ মাস আছে সামনে। আরো অনেক চাঁদাবাজি ও দখল আছে, মানুষ মেরে ফেলার সম্ভাবনা আছে, তখন পার্সেন্টেজ আরো কমবে ইনশাআল্লাহ।

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আমরা যারা পিআর আর সংস্কার চাই, তারা আবার ঐক্যবদ্ধভাবে এই দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করব। আমরা চাই না এত রক্তপাতের পর আবার কিছু করতে। আমরা শান্তি ও সমঝোতা চাই।

এদিকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির বিরোধিতা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণ এ ধরনের নির্বাচনি পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত নয়। বাংলাদেশের জন্য পিআর পদ্ধতি উপযোগী নয়। যারা পিআর দাবি করে তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহ থেকে যায়। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নীলফামারী জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন থেকে ‘আওয়ামী ক্যাডারদের’ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
 
রিজভী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। কিন্তু আওয়ামী আমলের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই প্রশাসন থেকে আওয়ামী ক্যাডারদের অপসারণ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব মতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। ছাত্র প্রতিনিধিরা থাকলেই শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা টিকে থাকে।

নীলফামারীর বিএনপি নেতাকর্মীদের নিপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, নীলফামারী এমন একটি জেলা যে জেলায় বিগত ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একজন মন্ত্রীর নির্দেশে গোটা নীলফামারী জেলাকে রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত করা হয়েছিল।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা এমন একটি রাজত্ব কায়েম করেছেন, যাতে কেউ একটি শব্দও করতে না পারে। আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরা ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং তাদের রাজনৈতিক নেতারা লাখো কোটি টাকা পাচার করেছে। রিজভী দাবি করেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। 

এ বিষয়ে কথা হলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক খোলা কাগজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত যা বলছে এগুলো হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। আর রাজনীতিবিদরা মাঠে যা বলে, অনেক সময় সেগুলো মনের কথা হয় না। সেই জায়গা থেকে বলা যায় ‘নির্বাচন হবে না’, ‘হতে দেওয়া হবে না’ কিংবা ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে’ এ বক্তব্যগুলো তাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  নির্বাচন   বাধা   জামায়াত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি
মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ
ভারতে আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান, অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লির
১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক
‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের সেরা পারফর্মারদের পুরস্কার বিতরণ

সর্বাধিক পঠিত

স্যুটার মান্নান হত্যা মামলার আসামি জুয়েল আটক
গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব
নীলসাগর গ্রুপের ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক
লাকসামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close