ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বিদেশে বসে দলটির শীর্ষ নেতারা দেশকে অস্থিতিশীল করার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েন। যদিও জুলাই গণঅভুত্থানে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো ঐক্য ও সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে তাদের সব চক্রান্ত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ফলে দেশকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার তাদের একের পর এক সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এদিকে কোনো ষড়যন্ত্র সফল করতে না পেরে সাম্প্রতিক শুরু করেছে নতুন এক ষড়যন্ত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর যত চক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরাসরি মাঠে ব্যর্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কৌশল এখন ভিন্ন। তারা ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে জামায়াত, বিএনপি, এনসিপিসহ সব ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চাইছে। কখনো জামায়াত সেজে বিএনপিকে, কখনো বিএনপি সেজে এনসিপিকে, আবার কখনো এনসিপি সেজে জামায়াতকে আক্রমণ করা হচ্ছে মন্তব্য ও পোস্টের মাধ্যমে। এমনকি ভুয়া সমর্থকদের মাধ্যমে গ্রাফিক্স, ভিডিও ও মিম বানিয়ে চালানো হচ্ছে দুরভিসন্ধিমূলক প্রচার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই ষড়যন্ত্রনির্ভর রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে। এখন তারা বুঝতে পারছে আন্দোলনের সম্মিলিত শক্তিকে সামরিকভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়, তাই মানসিক বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক বিভাজন তৈরিই তাদের প্রধান কৌশল। এ ডিজিটাল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করার গভীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন। তিনি গত বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়ে লিখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর একটিকে আরেকটির সঙ্গে পরিকল্পিত কোন্দল সৃষ্টি করা হচ্ছে। এরজন্য জামাত-শিবিরের কর্মীদের নামে ফেইক আইডি খুলে বিএনপির বিরুদ্ধে অশ্লীল কমেন্ট আর পোস্ট দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে বিএনপির কর্মীদের নামে ফেইক আইডি খুলে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্ট-কমেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হারপিক মজুমদারের একটি গ্রুপ থেকে এ কোন্দল ছড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী/ছাত্রলীগ আর সিআরআইয়ের ফুটফুটে সুন্দরেরা। তাদের অভ্যন্তরীণ একটি গ্রুপে এ ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানতে পেরেছি। অতএব, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ থাকল।’
এনসিপির এক নেতা বলেন, ‘আমরা জানি, আওয়ামী লীগের ডিজিটাল গুপ্তচর বাহিনী এমন কাজ করতে পারে। তাই আমরা দলীয়ভাবে এই ফাঁদে পা না দিয়ে যৌথ বিবৃতি, পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে বিভ্রান্তি দূর করব।’
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, এ কৌশলের ফলে ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় এনসিপি ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে অনলাইনে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যার প্রভাব মাঠের রাজনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের কাঠামো। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয়।
বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট-কমেন্টে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং দলগুলোর উচিত নিজ নিজ ভেরিফায়েড মিডিয়া সেল শক্তিশালী করে সাধারণ কর্মীদের সচেতন করা।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের কৌশল সামনে আরো বাড়তে পারে, বিশেষ করে নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে। তাই ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সমন্বিত ডিজিটাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই হতে পারে একমাত্র জবাব।
কেকে/ এমএস