চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নে এক ব্যবসায়ী পরিবারকে টার্গেট করে ধারাবাহিক হামলা, লুটপাট, নারী লাঞ্ছনা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের বিরুদ্ধে আনা এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনার শিকার সালমা বেগম (৫২) মতলব উত্তর থানায় মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে জুয়েল (৩০), মো. জুবায়ের হোসেন (২৬), মো. সাইফুল ইসলাম (২৭), মো. শাকিল হোসেন (২৪) বিবাদী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০–১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৩৫। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান আসামি উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা আরো বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে কিছুদিন আত্নগোপন ছিলেন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন ওরফে জুয়েলসহ তার ক্যাডার বাহিনী। কিন্তু এই যুবলীগ নেতার দলবল এখন এলাকায় এসে ত্রাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক রেখে সকল অপকর্ম করে বেড়ায়, রাতের আধারে পুকুরের মাছ লুট, জায়গা জমি দখলসহ এলাকায় চাঁদাবাজির মূলহোতা এরা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৩ মে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে পাঁচআনী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন সড়কে প্রথম হামলা ঘটে। সালমা বেগমের স্বামী মনির হোসেন ও ছেলে হৃদয় হোসেন (জখমি সাক্ষী ১ ও ২) বাজার থেকে ফিরছিলেন, তখন পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। লোহার রড, ছেনা ও লাঠি দিয়ে তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়, হৃদয়ের হাত কেটে যায় এবং মনির হোসেনের মাথায় আঘাত লাগে। সঙ্গে থাকা ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
পরদিন ১৪ মে রাত ১০টায় হামলাকারীরা দ্বিতীয় দফায় সালমা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বসত ঘর ভাঙচুর করে এবং ঘরে থাকা ৭০ হাজার টাকা, প্রায় সারে চার লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোবাইল ফোন লুট করে। প্রতিবাদ করলে সালমা বেগমের ওপর চুল ধরে টানা-হেঁচড়া ও পরনের কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সালমা বেগমের জানান, আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এলাকার প্রভাবশালী একটি চক্র বারবার আমাদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেছে। এবার তো আমার স্বামী-ছেলেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে, ঘরে ঢুকে মারধর করেছে, টাকা-স্বর্ণালংকার লুট করেছে। আমি বিচার চাই। এখনো ভয় পাচ্ছি, তারা খুনের হুমকি দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের সাথে লোকজনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক জানান, এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে জুয়েলকে আটক করা হয়েছে।
কেকে/এএম