দেশের ৬৫৪টি সরকারি হাসপাতালে ৫১ হাজার ৩১৬টি শয্যা থাকলেও সেখানে একজনও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক ২৫ শয্যার হাসপাতালের জন্য কমপক্ষে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। এ ঘাটতি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বক্তারা বলেন, হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্সের পাশাপাশি ওষুধ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টের অনুপস্থিতি রোগীর জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সঠিক ওষুধ বাছাই, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপত্র বিশ্লেষণে একজন দক্ষ ফার্মাসিস্টের ভূমিকা অপরিহার্য।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের হাসপাতাল ফার্মাসি কমিটির সভাপতি মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান ও কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
বক্তারা জানান, উন্নত দেশগুলোতে ‘ডাক্তার-ফার্মাসিস্ট-নার্স’ এ ত্রিমুখী সমন্বিত মডেল স্বাস্থ্যসেবার মূল ভিত্তি। কিন্তু বাংলাদেশে এ কাঠামোর ঘাটতির কারণে রোগীরা ভুল ওষুধ গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক সময় তা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকার ৭০০টি ফার্মেসি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের তত্ত্বাবধানে ফার্মেসি পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি প্রত্যেক ৫০ শয্যার জন্য ১ জন ফার্মাসিস্ট এবং বহির্বিভাগ ফার্মেসিতে ১ জন ফার্মাসিস্ট নিয়োগের সুপারিশ করেন।
বক্তারা বলেন, দেশের ফার্মাসিস্টরা ইতোমধ্যে ঔষধশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে ১৬০টির বেশি দেশে রফতানি করছে। কিন্তু হাসপাতাল পর্যায়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছাচ্ছে না।
সভায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষা ও স্বীকৃতি কমিটির সদস্য, হাসপাতাল ফার্মেসি কোর্সের শিক্ষক ও বেসরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরা অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, একজন প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট রোগীর সঠিক ওষুধ ব্যবহারে যে ভূমিকা রাখতে পারেন, তা ডাক্তার ও নার্সের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্যসেবাকে আরো নিরাপদ ও কার্যকর করে তুলবে।
কেকে/ এমএস