গাজীপুরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে মাল্টি পয়েন্ট বিডি (নগদ ডিস্ট্রিবিউটর অফিস) প্রতিষ্ঠানে ভল্ট থেকে ৯৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত নগদ ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধারসহ চারজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা।
শুক্রবার (২ মে) সকালে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, মাল্টি পয়েন্ট বিডি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার আউটপাড়া এলাকার রিয়াজ টাওয়ারের ৬ষ্ঠ তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে
গ্রেফতারকৃতরা হলো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর (হাজী বাড়ি) গ্রামের হাসান বেপারীর ছেলে আব্দুর রহমান রাজন (২৮), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কাহনিয়া গ্রামের ফারুকের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩০), পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ছোট চরশিবা গ্রামের হাসান মৃধার ছেলে উজ্জল (৩৬) এবং মিরাজ (২৫)।
আসামিরা গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতো। তাদেরকে বৃহস্পতিবার (১ মে) গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত বিশ্বাস জানান, রবিবার (১৪ এপ্রিল) বিকেল পৌণে ৬টায় অজ্ঞাত ৩/৪ জন ব্যাক্তি মাল্টি পয়েন্ট বিডি অফিসে প্রবেশ করে নিজেদেরকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয় দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্যাসিনো (জুয়া) এবং অবৈধ লেনদেনের ব্যাবসা চলে। এসময় অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের সাথে থাকা অস্ত্র দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে এলোপাথারীভাবে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা অফিসের ভল্টে থাকা নগদ ৯৮ লাখ টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। পরে প্রতিষ্ঠানের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ একরামুল হক বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর পল্টন থানার ফকিরাপুল (কাঁচাবাজার) এলাকা থেকে আসামী আব্দুর রহমান রাজনকে গ্রেফতার করে। তার দেথা তথ্য ঘটনায় জড়িত রবিউল ইসলাম, উজ্জল এবং মিরাজকে বুধবার (৩০ এপ্রিল) ভোলার দুলারহাট থানার শিকদারচর (কিল্লার মাঠ) এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা স্বীকার করে দুই মাস পূর্বে আসামী আব্দুর রহমানের সাথে মহানগরীর চান্দনা ঈদগাহ মাঠে পরিচয় হয় আসামি রবিউলের। তখন আব্দুর রহমান তাকে জানায় তাদের অফিসে অনলাইনে ক্যাসিনো (জুয়া) এবং অবৈধ লেনদেনের ব্যাবসা চলে। ১০/১৫ দিন পর রবিউল আব্দুর রহমানকে নিয়ে তার বন্ধু মিরাজের কাছে গিয়ে তাদের অফিসে অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যাবসার কথা জানায়। এর ৪/৫ দিন পর মিরাজ তার সহোদর ভাই উজ্জলকে নিয়ে আব্দুর রহমানের কাছে আসে। উজ্জল রাজধানীর মিন্টু রোডের গোয়েন্দা (ডিবি) অফিসে চাকুরী করে জানালে মিরাজ এবং উজ্জল পরিকল্পনা করে ডিবি পরিচয়ে তারা নগদ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে ঢুকে কম্পিউটার তল্লাশি দিয়ে ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য সংগ্রহ করে অফিসের টাকা পয়সা হাতিয়ে নিবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার (১৪ এপ্রিল) বিকালে উজ্জ্বল, মিরাজসহ তাদের চার সহযোগী নগদ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে ডিবি পরিচয়ে প্রবেশ করে অবৈধ ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ততার কথা বলে অস্ত্রের মুখে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে অফিসের ভল্ট থেকে ৩ টি ব্যাগে করে ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের সাথে আরো ৬জন আসামিসহ মোট ১০ জন ছিল।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি ডাকাতির ঘটনা। আসামিরা নিজেদেরকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে মাল্টি পয়েন্ট বিডি (নগদ ডিস্ট্রিবিউটর অফিস) প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের এলোপাথারী মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৩ টি ব্যাগে করে ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
কেকে/ এমএস