মহান মে দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে বর্ণাঢ্য র্যালি ও শ্রমিক সমাবেশ থেকে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা দলে দলে এসে গাজীপুর চৌরাস্তা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে র্যালিতে অংশ নেন। এরপর ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনীম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল আমিন।
কর্মসূচিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাপাসিয়া উপজেলা শাখা, গাজীপুর অন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়ন, উপজেলা শ্রমিক দল, নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, রং মিস্ত্রি শ্রমিক ইউনিয়ন, সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি কাপাসিয়া শাখা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন। পৃথকভাবে এসব সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর মহানগর সভাপতি মো. শফিউল আলম। গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ।
শফিউল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শ্রম অসন্তোষ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা এবং ত্রিপক্ষীয় চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন না করার কারণে কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ন্যায্য দাবি তোলা শ্রমিকদের তথ্য বিজিএমইএর ডাটাবেজে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হচ্ছে, ফলে তারা অন্য কারখানায় চাকরি পাচ্ছেন না। এতে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের নামে মামলা, হামলা এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা বেড়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে।
তিনি দাবি তোলেন—
১. বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল করতে হবে।
২. বন্ধ কারখানা চালু করতে হবে।
৩. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি পরিশোধ না হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. নারী শ্রমিকদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি আইন পাস করতে হবে
৫. রানা প্লাজা, তাজরীন অগ্নিকাণ্ডসহ সব শ্রমিক হত্যার বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে।
৬. ৩ বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণ এবং মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ১৮ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. শিল্প কারখানায় রেশনিং চালু করে জাতীয় মজুরি ঘোষণা দিতে হবে।
৯. ইপিজেড শ্রমিকদের শ্রম আইন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১০. ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
শফিউল বলেন, ডার্ড গ্রুপ বেআইনিভাবে ৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে, যেখানে ১৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ১৮ মাস ধরে আন্দোলন করছেন। সরকার ইতোমধ্যে ১৩ কোটি টাকা লোন দিলেও মালিকপক্ষের অনিয়মের কারণে শ্রমিকরা নামমাত্র টাকা পেয়েছেন।
তিনি জানান, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ডার্ড গ্রুপসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ এবং সাভারের ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডে চলমান শ্রম অসন্তোষের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম উপদেষ্টা ৭ মে ২০২৫-এর মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সব বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে মালিকপক্ষ যদি সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, বলেন তিনি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের প্রিয় নেতা শফিউল আলমের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে অনড় থাকার কারণেই মালিকরা ষড়যন্ত্র করে তাকে ৪১ দিন কারাগারে পাঠিয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের মামলা-হামলা দিয়ে দমন করা যাবে না।
কেকে/এএম