উন্নয়নের বারতা-নারী পুরুষ সমতা। সমাজে নারী-পুরুষের সমান্তরাল কর্মপদ্ধতির ক্রমবিকাশে এগিয়ে চলা নারী সমাজের মূল শক্তি জাগরণ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশনার( ভূমি) সহ পৌরসভার প্রশাসক (মেয়র) এ ৪ গুরুত্বপূর্ণ পদ একাই সামলাচ্ছেন বাঞ্ছারামপুর প্রশাসনের নিউক্লিয়াস ফেরদৌস আরা।
গত ৯ জানুয়ারি ২০২৫ হতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ফেরদৌস আরা। একজন মেধাবী ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ফেরদৌস আরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
পরবর্তীতে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তার কর্মদক্ষতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা প্রশংসিত হয়।
ফেরদৌস আরার পৈতৃক নিবাস চাঁদপুর জেলায় হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন ঢাকা জেলায়। তার শৈশব ও শিক্ষাজীবন অত্যন্ত মনোযোগ এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়েছে, যা তার আজকের সাফল্যের মূল ভিত্তি। এক কন্যা সন্তানের জননী ফেরদৌস আরার স্বামী একজন শিক্ষক। স্বামীর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।
তিনি বলেন, বাসায় মেয়েটাকে রেখে আসি। ওর জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকে, কিন্তু সবার আগে কাজ ও দায়িত্ব। বাঞ্ছারামপুরের সাড়ে ৪ লাখ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। উপজেলায় এসি ল্যান্ড ও পৌর প্রশাসকের পদ খালি। সেগুলোর কাজও আমাকে করতে হয়। ফলে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছি। অফিসে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করে বাদবাকী ফাইল বাসায় নিয়ে যাই। তারওপর,চলছে এসএসসি পরীক্ষার তদারকি।
ফেরদৌস আরা বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তার মেধা ও অভিজ্ঞতা উপজেলাকে আরো উন্নত এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক হবে বলে সবাই আশাবাদী।
ইতোমধ্যে তিনি নারী হয়েও দু’মাস আগে জীবন বাজি রেখে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দিতে বালুদস্যুদের দমন করতে যেয়ে কোটি টাকার ৪টি ড্রেজার জব্দ করেছেন। ভূমি দস্যুদের আটক ও জরমানা বা মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা করেছেন।
নারী জাগরন:
নতুন ইউএনও হিসেবে তিনি উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি,ভূমি দস্যু -বালু খেকোদের দমন,দূর্ণীতি ও এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরো মনোনিবেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জনসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করবেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তার কার্যকালীন সময়ে নতুন উদ্যোগ এবং উন্নয়নের ধারায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে স্থানীয়রা প্রত্যাশা করছেন।
সামাজিক অনাচার দূর করে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রেখে নারী জাগরণে তৎপর বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফেরদৌস আরা । তিনি সেবাগ্রহীতা সকলের কাছে আস্থার নাম। এ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই রুটিন ওয়ার্কের মাধ্যমে নারী জাগরণে কাজ করছেন তিনি।
সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রশিক্ষিত করে উদ্যোক্তা তৈরি করে স্বাবলম্বী করা যার অন্যতম লক্ষ্য। লাভজনক ও আয়বর্ধক প্রকল্পে নারীকে সম্পৃক্ত করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর,যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এ উপজেলার কয়েকশ নারীকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী আজ সফল উদ্যোক্তা। অবহেলিত নারীর চেতনাবোধকে জাগ্রত করে অর্থনৈতিক মুক্তি ও ক্ষমতায়ন বিশেষ করে জাগরণের আলোকে সমাজে নারীর সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি যার আশা।
জানা গেছে, নাগরিক সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একজন ইউএনও উপজেলা পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের সকল নীতিমালা বাস্তবায়ন,বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় সাধন, উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কাজের তদারকিকরণের কাজ করে থাকেন। তাছাড়া নারী জাগরণ ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদারকরণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এর বাইরে বাবা-মার ভরণ-পোষণে সন্তানের অনীহা, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়তা প্রদান, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও বিরোধের অবসানকল্পে কাজ করেন ইউএনও ফেরদৌস আরা। পাশাপাশি কাজ করতে ভুলেন না নারী জাগরণে।
দরিয়াদৌলত গ্রামের বাসিন্দা ও জয়িতা বিজয়ী ফিরোজা বেগম বলেন। ২০২৪ সনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ক্যাটাগরিতে আমি জয়িতা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি। ফেরদৌস আরা ম্যাডাম, নারী জাগরনে অনেক আন্তরিক।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাবেয়া সুলতানা ইভা বলেন, আমরা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সেলাই, ফুড প্রসেসিং, ব্লক - বাটিকসহ পাঁচটি ট্রেডে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষিত করি। যাতে আয়বর্ধক উদ্যোগে সমাজে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়। আর সমাজের অনগ্রসর নারীদের জাগরণে ইউএনও ম্যাডাম বরাবরই আন্তরিক।
ব্যর্থতা:
সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতা হিসেবে এলাকাবাসী মনে করেন মাত্র ৪ মাসের মধ্যে সফলতা বা ব্যর্থতার ফলাফলের রেটিং দেয়ার সময় এখনো হয়নি। তবে তিনি বহুলাংশে সফল। মাদক নির্মূলে পুলিশ প্রশাসনকে আরো বেশী বেশী কাজে লাগাতে হবে। এছাড়াও জেলার সবচেয়ে বেশী বাল্যবিবাহ প্রবণ ইউনিয়ন ‘সোনারামপুর ইউপির কাজীর’ বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেকে/ এমএস