চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের ‘টো’ বাণিজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে গত কয়েকবছর ধরে বসানো অন্ধকার পুলিশ কক্ষের ভেতরেই ‘টো’ বাণিজ্য ছাড়াও গাড়ির বিভিন্ন ডকুমেন্টের বিপরীতে অপরাধীদের সঙ্গে অবৈধ অর্থ লেনদেন অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল রোববার ট্রাফিক পুলিশের এক ‘টো’ বাণিজ্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমশিনারের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন এক মোটর সাইকেল চালক।
পুলিশ কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল আবু বক্করের বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগে লেখা রয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল নগরীর কদমতলী মোড়ে মোটরসাইকেল আরোহী হাফেজ মো. আবু তাহের সকাল ১০টার দিকে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক মো. রইস উদ্দিনসহ সাবেক শিক্ষক হাফেজ মো. আবু তাহের মোটরসাইকেলে(চট্টমেট্রো-হ-২৩-০২২২) করে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন। নগরীর কদমতলী মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন সদস্যের একটি টিম মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। কারণ চালকের হেলমেট থাকলেও সহযাত্রীর হেলমেট ছিল না। পরক্ষণে ট্রাফিক পুলিশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও টেক্স টোকেন এবং ‘ব্লু’ বুক দেখতে চান। কিন্তু চালক ডকুমেন্টের ফটোকপি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। পরে রাস্তার মোড়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশের অন্ধকার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় চালককে। পরবর্তীতে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মোটরসাইকেলের চালক হাফেজ আবু তাহেরকে একটি ‘টো’ স্লিপ(নং-৬৯২১৫, তারিখ-২৩/৪/২৫) ধরিয়ে দিয়ে মূল কাগজপত্র দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিতে বলেন।
ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ‘টো’ স্লিপের সূত্র ধরে মোটরসাইকেল চালক ফৌজদারহাটে তার বাসা থেকে অরিজিনাল ডকুমেন্ট নিয়ে নগরীর সদরঘাটের ট্রাফিক পুলিশের ডিসি(দক্ষিণ) এর দফতরে যান। সেখানে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ালে আবু তাহেরকে বলা হয় সীমানা প্রাচীরের ভেতরে থাকা ক্যান্টিনে যেতে। ক্যান্টিনে একটি ফটোকপি ম্যাশিন ও বিকাশ এজেন্ট নিয়ে বসে আছে পুলিশের আরেক সদস্য। মোটরসাইকেল মালিক ডিসি ট্রাফিকের(দক্ষিণ) সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আবু বক্কর নামের এক কনস্টেবল বলেন ‘ডিসি স্যার’ মিটিংয়ে আছেন। ‘টো’ স্লিপের সমস্যাটা ওই কনস্টেবলই সমাধান করেন। একথা বলে আবু তাহেরকে জরিমানা বাবদ ৫৪০০/-(পাঁচহাজার চারশত) টাকা দিতে বাধ্য করেন। দীর্ঘ প্রায় এক ঘন্টা পর রেকার ভাড়া আদায় (রশিদ নং-৬৩৯৯৪) বাবদ ৪০০/-(চারশত) টাকার নাম-পদবী বিহীন স্বাক্ষরিত একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন। অভিযোগ উঠেছে, যাহাতে কত নং রেকার এর ভাড়া আদায় করা হয়েছে— তা উল্লেখ করা হয়নি। একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে ‘টো’ করা যানবাহনের ছাড়পত্র নং-১২৪৯ এর বিপরীতে আবু তাহেরের মোটরসাইকেলটি নগরীর দক্ষিণ বিভাগের ডিসি ট্রাফিকের ডাম্পিং স্টেশন থেকে গাড়িটি অবমুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে মোটরসাইকেল চালক আবু তাহের খোলা কাগজকে বলেন, আমাকে ৫ হাজার ৪০০ টাকার স্থলে মাত্র ৪০০ টাকার প্রাপ্তি রসিদ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৫ হাজার কোন লিখিত না দেওয়ায় আমি সিএমপি কমিশনার বরাবরে অভিযোগ করেছি অনিয়ম বন্ধ করতে।
এ ব্যাপারে ডিসি ট্রাফিক(দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খোলা কাগজকে বলেন, রেকার ভাড়া ৭৫০ টাকা কিন্তু ৪০০ টাকা কেন নিল? আবার ৫ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে ৫ হাজার টাকার কোন রশিদ কেন দেয়নি তা আমি খতিয়ে দেখছি। অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনি নিউজ করার দরকার নেই আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কেকে/এজে