শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫,
৭ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও      রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই      ইতা‌লির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঢাকা সফর বাতিল      সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট      মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      
দেশজুড়ে
তিস্তার সুন্দরগঞ্জ অংশে নেই পানির স্তর মাপার ব্যবস্থা
ঝুঁকিতে জনপদ, ভরসা ৫০ কিমি দূরের তথ্যে
সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৩৭ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

তিস্তা নদী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রায় ৩২ কিলোমিটারজুড়ে প্রবাহিত। এই দীর্ঘপথে সরাসরি পানি প্রবাহ ও স্তর পরিমাপের কোনো গেজ স্টেশন নেই। অথচ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই নদীর আচরণ হয়ে ওঠে ভয়াবহ—হঠাৎ স্রোতের গতি বাড়ে, ভাঙন তীব্র হয়, আর বিপদ ডেকে আনে জনপদের জন্য।

এই অবস্থায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা পাড়ের মানুষকে নির্ভর করতে হয় রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টের তথ্যের ওপর, যা এখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। এতে করে নদীর হঠাৎ রুদ্রমূর্তির আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব হয় না।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ইউনিয়ন—বেলকা, তারাপুর, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কঞ্চিবাড়ী ও দহবন্দ—মিলিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। অনেক সময় পানি হঠাৎ বাড়ার ফলে পরিবারগুলোকে ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হয়। ২০২৪ সালে শুধু এক মৌসুমেই তিস্তার পানি বেড়ে প্লাবিত হয় ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ হাজার পরিবার। এর মধ্যে অন্তত ৭৫০টি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ৯৫ হেক্টরের বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তিস্তার পানি স্তর পরিমাপের জন্য রংপুরের কাউনিয়া এবং লালমনিরহাটে গেজ পয়েন্ট রয়েছে। তবে এই দুটি গেজ পয়েন্ট শুধুমাত্র ওই অঞ্চলগুলোর পানির স্তর পরিমাপ করে। নদীটির ভিন্ন ভিন্ন অংশে পানির গতিবিধি, স্রোতের গতি এবং পানির স্তরের পরিবর্তন ভিন্ন হতে থাকে, যার ফলে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের তথ্য দিয়ে পুরো নদীর প্রবাহের অবস্থান সঠিকভাবে প্রতিফলিত করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা অংশে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দূরের গেজ পয়েন্ট থেকে জানা সম্ভব নয়। শুধু রংপুর ও লালমনিরহাটের গেজ পয়েন্টের তথ্যের ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি অনেক সময় স্থানীয় পরিস্থিতি এবং নদীর আচরণকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্থানীয় পর্যায়ে গেজ স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

চরাঞ্চলের তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান সরকার রয়েল বলেন, আমাদের এখানে যদি গেজ স্টেশন থাকতো, তাহলে অন্তত কিছু আগাম সংকেত পেতাম। নদী তো কথা বলে না, হঠাৎ করেই পানি বাড়ে এবং সব কিছু তলিয়ে দেয়। যদি জানা যেত যে পানি বাড়ছে, তাহলে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিতে পারতাম এবং ক্ষতি কিছুটা কমানো যেত।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের বাসিন্দা নাজমুল হুদা বলেন, হঠাৎ করে যখন ঘরে পানি ওঠে, অথচ তখন বলা হয় পানি বিপদসীমার নিচে! এমনভাবে আমাদের কিছু জানানো হলে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেব? যে মুহূর্তে পানি বাড়ে, তখনই আমাদের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই পানির স্তর সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে পারি।

হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, নৌকা চালাতে গিয়ে বুঝি কখন স্রোত বেড়ে গেছে। কিন্তু যদি আগেভাগে পানি বৃদ্ধির খবর পেতাম, তাহলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব হতো। নদীতে যখন স্রোত বাড়ে, তখন নৌকা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে, তাই পানির স্তরের সঠিক তথ্য জানা জরুিরি।

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের বাসীর দাবি, তিস্তার তীরে একটি গেজ স্টেশন স্থাপন এখন সময়ের দাবি। এটি হলে শুধু আগাম সতর্কতা নয়, একই সাথে উন্নয়ন পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। গেজ স্টেশন স্থাপন হলে নদীজনিত সমস্যা মোকাবেলা এবং স্থানীয় উন্নয়ন আরো সুচারু হতে পারে।

ভাটিকাপাসিয়া সেচিপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা স্কাউটস সম্পাদক এম মাহফুজার রহমান লেলিন বলেন, সুন্দরগঞ্জ এত বড় একটা এলাকা, অথচ এখানকার পানির স্তর পরিমাপের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই! এটা খুবই অস্বস্তিকর। সংশ্লিষ্টদের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং গেজ স্টেশন স্থাপন করা, যাতে মানুষ আগাম সতর্কতা নিতে পারে এবং তাদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষিত থাকে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের জুরিখ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তাপাড়ে একটি গেজ স্টেশন স্থাপন করা হলে প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন ও তাদের ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হবে। আগাম সতর্কবার্তা ও পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস জানা গেলে নদীভাঙন ও বন্যাজনিত ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, তিস্তার পানি পরিমাপের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় আমার ইউনিয়নসহ পুরো তিস্তাপাড়ের কৃষকরা এবং সাধারণ মানুষ প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়েন। স্থানীয় গেজ স্টেশন স্থাপন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারব, যা ক্ষতি কমাতে সাহায্য করব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাশিদুল কবির বলেন, তিস্তার পানির স্তরের সঠিক পরিমাপ না হওয়ায় প্রতি বছর কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আবাদি জমি তলিয়ে যায় এবং ফসল নষ্ট হয়। স্থানীয় গেজ স্টেশন স্থাপন করা হলে কৃষকরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে পারবেন, যা তাদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, তিস্তার সুন্দরগঞ্জ অংশে পানির স্তর পরিমাপের জন্য একটি স্টেশন স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। এতে করে সময়মতো নদীর পানির প্রবাহ ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হবে। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করব।

গাইবান্ধা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, তিস্তা নদী অত্যন্ত গতিশীল। বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর ও প্রবাহে পার্থক্য থাকে। রংপুরের কাউনিয়া ও লালমনিরহাটের গেজ পয়েন্ট সুন্দরগঞ্জের সঠিক চিত্র দেয় না। তাই স্থানীয় গেজ স্টেশন স্থাপন জরুরি।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে হরিপুর ব্রিজ পয়েন্ট এলাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছেন এবং গেজ স্টেশন স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে, আসন্ন বন্যায় এই স্টেশন থেকেই স্থানীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ফের পিএস বিতর্কে আসিফ
ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও
রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই
কুমিল্লায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নীলফামারীতে বালিকাদের ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close