বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নিকট আত্মীয়দের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয় মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়া। পরিবারের সদস্যদের জন্য এবারের ঈদ ছিল শুধুই দীর্ঘশ্বাসে মোড়া। ঈদের দিন মায়ের মুখে ছিল না এক ফোঁটা হাসি, কবরের নিস্তব্ধতায় কেটেছে পুরো পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দিন।
ঈদের পরদিন সরেজমিনে আছিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করা আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মাস না পেরোতেই যথানিয়মে ঈদ এসেছে। অন্যান্য বাড়িতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকলেও আছিয়ার বাড়িতে কোনো আনন্দের আয়োজন ছিল না। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একমাত্র ছোট ভাই শিশু আলামিন বোনের স্মৃতিচারণ করে কাঁদছিল। প্রতিবার দুই বোন একসঙ্গে ঈদের মেহেদিতে হাত রাঙালেও এবার জোড়া ভেঙেছে বড় বোন হাবিবার।
বৃদ্ধা দাদি জোহরা বেগম নাতনির শোকে কান্না ভুলে গেছেন। মেয়ের মৃত্যুতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া আছিয়ার বাবা বর্তমানে চিকিৎসাধীন ঢাকার একটি হাসপাতালে। ঈদের আগে সরকারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এসে তাদের খোঁজখবর নেন এবং ঈদ উপহার দেন। কিন্তু এতে একটুও আনন্দ উপভোগ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি আছিয়ার মায়ের মনে। তার একটাই চাওয়া—আছিয়ার জন্য সুবিচার। হত্যাকারী ও তাদের সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান তিনি।
নিহত আছিয়ার মা আয়েশা খাতুন জানান, আছিয়ার বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখসহ ওই পরিবারের প্রতিটি মানুষই এই ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। তাদের সবার ফাঁসি হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। দ্রুত বিচার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চান তিনি।
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোন হামিদার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তার স্বামী সজিব ও শ্বশুর হিটু শেখের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় মাত্র আট বছর বয়সী আছিয়া। এক সপ্তাহ পর, ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এই নির্মম ঘটনার পর আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার প্রধান আসামি হিটু শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার চারজন আসামিই বর্তমানে মাগুরা জেলা কারাগারে আটক রয়েছে।
কেকে/এএম