চলমান মৌসুমে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় শাক-সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা, বাড়তি উৎপাদন খরচ ও বাজারদর মন্দ থাকায় চাষিরা এক প্রকার হতাশ হয়ে পড়েছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার খোলা বিলে, নদী-খালের চরে দেখা যায় বিস্তৃত আলু ক্ষেত। বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেতের পাশাপাশি এ সব আলু ক্ষেত শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে পদুয়ার জঙ্গল পদুয়া, হানিফার চর, ধলিবিলা, ফরিয়াদিকূল, নাওঘাটা, আঁধারমানিক, কলাউজানের আচার চর, আমিরাবাদের হাজারবিঘা, রাজঘাটা, ঘোনা পাড়া, মহুরী পাড়া, জলিল নগর, ৩ খালের মুখ, বড়হাতিয়ার চাকফিরানী, কুমিরাঘোনা, হরিদারঘোনা, মছনেরখিল, ভবনীপুর, আধুনগরের ডলুনদীর চর সংলগ্ন আলুরঘাট, পশ্চিম আমিরাবাদসহ উপজেলার আরো বিভিন্ন এলাকায় আলু ক্ষেতে চাষিরা প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করছেন।
বিশায় আয়তনবিশিষ্ট অর্থাৎ ১০ হাজার ৪ শত শতক এলাকা জুড়ে রয়েছে আলু ক্ষেত। অদূরে বিলের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টঙ্কাবতী নদী। বিলের উপরিভাগে টঙ্কাবতী নদীর উপর রয়েছে রাবার ড্যাম। এলাকার সিংহভাগ মানুষ কৃষিজীবী। মৌসুমে তারা কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করে জীবন-জীবিকার ব্যয়ভার নির্বাহ করেন। বিলের কৃষি কাজের সহিত জড়িত প্রায় ২ শতাধিক চাষি ধান চাষ ছাড়াও প্রতি মৌসুমে তারা বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী শাক-সবজি ও তরি-তরকারি উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত থাকেন। আউঁশ, আমন ও বোরো চাষের ফাঁকে তারা ওসব শাক-সবজি ও তরি-তরকারি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটান। বিশেষ করে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতি ডিসেম্বরের শেষার্ধে আলু চাষে ব্যস্ত থাকেন চাষীরা। ফলন পান মার্চ মাসে। কিন্তু সেচ, সার ও কীটনাশক সংকটে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
গত ৬ মার্চ ওই এলাকা পরিদর্শনকালে আলু চাষিরা এসব কথা বলেন। ওই সময় আলু চাষিদের মধ্যে নুরুল আবছার, মোবারক আলী, তপছির আলম ও শাকিল প্রমুখ আলু চাষিদের সহিত আলাপ করলে তারা জানান, তারা প্রত্যেকই ১ শত ২০ শতক জায়গায় আলু চাষ করেছেন। প্রতি কানি অর্থাৎ ৪০ শতক জায়গায় আলু চাষ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে তারা প্রতি ৪০ শতকে বা ১ কানিতে আলু পাওয়ার আশা করেন ৫০-৬০ মন। খরচ বাদে স্বাভাবিক বাজারদার বজায় থাকলে তারা প্রতি কানিতে লাভের আশা করেন ৩০-৪০ হাজার টাকা।
তারা দুঃখের সঙ্গে জানান, চলমান বাজারদর বজায় থাকলে তারা এ বছর আলু চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তারা জানান, বর্তমানে চওড়া মূল্যে সার ও কীটনাশক ক্রয়ে দিশেহারা। এ ছাড়া তাদের বড় ধরণের সমস্যা হল সেচ ব্যবস্থার। আলু চাষে অত্যাধিক পানির প্রয়োজন হয়। ক্ষেতের উপরীভাগে টঙ্কবতী নদীর ওপর রাবার ড্যাম থাকায় তারা সময় মতো নদী থেকে পানি তুলে ক্ষেতে পানি দিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। রাবার ড্যাম পানি ছাড়লে তারা এ সমস্যার সম্মুখীত হতেন না। তাই উক্ত চাম্বার বিল এলাকার ২ শতাধিক চাষি সরকারিভাবে একটি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার কাজী শফিউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এবার উপজেলায় প্রায় ৭ শত ৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এ চাষের সঙ্গে আনুমাণিক আড়াই শহস্রাধিক চাষি জড়িত।
আলু চাষিদের সেচ সংকট সম্পর্ক তিনি বলেন, তারা একটি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দরখাস্ত দিতে পারেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রযোজনীয় সহয়তা দেবেন বলে উল্লেখ করেন।
কেকে/এএম