বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো আয় থেকে অর্জিত রেমিট্যান্স। সারাদেশের মতো এই রেমিটেন্স যোদ্ধারা বদলে দিয়েছে বাঞ্ছারামপুর। সেই ৯০ দশকের দিকেও একটি অবহেলিত অনুন্নত উপজেলা হিসেবে পরিচিত ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বাঞ্ছারামপুর। প্রমত্তা মেঘনার কোলঘেষা তিতাস বহমান বাঞ্ছারামপুর আজ প্রবাসী উপজেলা হিসেবে পরিচিত।
এখানকার গর্বিত সন্তানেরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নিজের পাশাপাশি এলাকার জনজীবনে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এবং সামাজিকভাবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে এখানকার গ্রামীণ জীবনের চিত্র। অন্যভাবে বলতে গেলে পুরো বাঞ্ছারামপুরের উন্নয়ন অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছেন এখানকার প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধারা। যাদের নিয়ে বাঞ্ছারামপুর আজ গর্বিত। এখানকার সন্তানেরা মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপ আমেরিকা এমনকি আফ্রিকা মহাদেশেও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ উপজেলা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (জুলাই /২০২৪) প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা জেলায় ৫২৩ কোটি ডলার ও চট্টগ্রাম জেলায় ১৪২ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে। এই সময়ে সিলেট জেলায় ৮৭ কোটি, কুমিল্লায় ৮১ কোটি ও নোয়াখালীতে ৪৬ কোটি ডলার এসেছে। এ ছাড়া এই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ও নরসিংদীতে ২৫ কোটি ডলার আসে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী রেমিট্যান্স আসে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে প্রবাসী রেমিটেন্সে বাঞ্ছারামপুর দেশের শীর্ষ ১০টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম। বলতে গেলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে, প্রতিটি ঘরে প্রবাসী রয়েছেন। উপজেলার অনেক গ্রাম বলতে গেলে পুরুষ শুন্য। অনেক পরিবারে বাবা, ছেলে এমনকি দাদাও প্রবাসী। আবার অনেক পরিবারের সব সদস্যই প্রবাসী। আর সেই কারণেই মাত্র ৩০ বছরের ব্যবধানে বদলে গেলো বাঞ্ছারামপুর উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র।
উপজেলার দরিকান্দি গ্রামের মোজাম্মেল হক অদুদ মিয়া সর্বপ্রথম বাঞ্ছারামপুরবাসীকে স্বপ্ন দেখায়। তারপর একই গ্রামে মো. হানিফ ওরফে মিদন মিয়া এবং মানিকপুর গ্রামের আলহাজ আবু মো.নোমান, মো. ফজলুল করিম সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। একইভাবে দরিকান্দির আবদুস সাত্তার, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার হাজার হাজার রেমিটেন্সযোদ্ধা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও আরো অগণিত রেমিটেন্সযোদ্ধা এলাকার সার্বিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আয়তন ৭২.৩২ বর্গ মাইল, জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ, স্বাক্ষরতার হার ৩৮.৫%।
উপজেলাটির অন্যতম সমস্যা রাজধানীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন (ফেরীতে এখনো যাতায়াত করতে হয়) করতে না পারা, স্কুল কলেজ থেকে ঝরে পড়ার হার ও বাল্যবিবাহ রোধ করতে না পারা। এ ছাড়া চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে উপজেলাটি।
কেকে/ এমএস