কক্সবাজারের টেকনাফে একই দিনে জোড়া অভিযানে নাফ নদী থেকে বিপুল ইয়াবা এবং দেশীয় চোলাই মদসহ ২ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান পিএসসি এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মায়ানমারের মংডু এলাকা হতে ইয়াবার একটি বড় চালান পাচারের উদ্দেশ্যে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি'র অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বেড়িবাঁধের কেওড়া বাগানের আড়াল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এ প্রেক্ষিতে ২ বিজিবি অধিনায়কের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী জোরদার করা হয়। এবং সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখতে সার্বক্ষণিক সতর্কতার অংশ হিসেবে আনুমানিক সাড়ে আট ঘটিকায় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি এর অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-৫ হতে আনুমানিক ৩ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে জিন্নাখালের বিপরীতে মায়ানমার থেকে চুপিসারে একটি নৌকা মাছ ধরার ছদ্মবেশে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হয়। নৌকাটি নাফ নদী সংলগ্ন জিন্নাখালের কিনারায় আসলে কেওড়া বাগানের ভিতরে কৌশলগত অবস্থানে থাকা ২ বিজিবি’র আভিযানিক দল সেই স্থান হতে পলায়নের সকল পথ অবরুদ্ধ করে। বিজিবি সদস্যদের তাৎক্ষণিক উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারী চক্রটির একজন সদস্য হাতের একটি কালো ব্যাগ সহ কাদায় ঝাপিয়ে পড়লে তাকে ধাওয়া করে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছে ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার পিস বার্মিজ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে পাচার চক্রের অপর দুই সদস্য নৌকা নিয়ে দ্রুততার সাথে মায়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, একই দিনে দমদমিয়া চেকপোস্টে সকাল ১০ ঘটিকায় কক্সবাজার হতে টেকনাফ গামী ১টি পায়রা সার্ভিস যাত্রীবাহী বাস (কক্সবাজার জ-১১-০২৬৮) থামিয়ে নিয়োমিত তল্লাশির একপর্যায়ে কে-৯ দল ও নারকোটিক্স ডগ ‘মেঘলা’ বাসের বক্সে রাখা আপত দৃষ্টিতে মনে হওয়া মুরগির বিষ্ঠা ভর্তি বস্তায় ক্রমাগত ঘ্রাণ নিয়ে মাদকের উপস্থিতি জানান দেয়। মেঘলার সংকেত এবং একই সঙ্গে যাত্রীর অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে বিজিবি সদস্যরা ঐ বস্তা হতে বিশেষভাবে লুকানো অবস্থায় ২০ লিটার দেশী চোলাই মদ উদ্ধারের পাশাপাশি মাদক বহনকারিকে গ্রেফতার করে।
আসামি মাদকের ঘ্রাণ লুকানোর জন্য এই তীব্র গন্ধযুক্ত বস্তাটি ব্যবহার করলেও বিজিবি ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষিত ডগ ‘মেঘলা’ তার ভেতর থেকে এ মাদক দ্রব্যের উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এই সফল অভিযানটি সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করার বিজিবি'র দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ফসল।
এ বিষয়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান পিএসসি বলেন, সীমান্তাঞ্চলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিজিবি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। যা স্থানীয় জনমনে গভীর আস্থা ও ইতিবাচক মনোভাবের সঞ্চার ঘটিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় মানব ও মাদক পাচারসহ সকল প্রকার আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিজিবি'র এই বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, আজকের অভিযানসহ গত ১৬৮ ঘন্টায় সর্বমোট ৮টি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন -২ বিজিবি (চার লক্ষ একানব্বই হাজার নয়শত বিশ) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০ লিটার দেশীয় চোলাই মদ ও ১২ জন আসামি আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মাদক পরিবহনের দায়ে আটককৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রুজু এবং মাদকদ্রব্য আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে।
কেকে/ এমএস