বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      
দেশজুড়ে
ঐতিহ্য ও জীবিকার মেলবন্ধন
দেশের সর্ববৃহৎ নেছারাবাদ ভাসমান কাঠের বাজার
বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রোববার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১:৩৩ পিএম
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার কয়েকটি চরে কালের বিবর্তনে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী বিশাল আকৃতির দেশীয় কাঠের ভাসমান বাজার। এক সময় এই ব্যবসা ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার অন্যতম বড় অবলম্বন।

ঐতিহ্যবাহী এই ভাসমান কাঠ বাজারের ইতিহাস ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের। গত কয়েক দশক ধরে কাঠ ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা ভালো নেই। পরিবহন সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব ও পাইকারি ক্রেতার অভাবসহ নানা সংকটে আজ হুমকির মুখে দক্ষিণাঞ্চল তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঠের বাজার।

নেছারাবাদ থানা সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর শাখা, সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের খালের চর, ইন্দেরহাট খালের মোহনা, মিয়ারহাট বাজারের খাল ও বয়াসহ নানা স্থানে গড়ে ওঠা ভাসমান বাজারটি এখন নেছারাবাদের সব থেকে বড় কাঠ ব্যবসাকেন্দ্র। এ ব্যবসার মাধ্যমে এখানে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ব্যাবসায়ী ও শ্রমিক এই বাজারকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

নেছারাবাদ সুন্দরী কাঠ ও গোলপাতার সর্ববৃহৎ ভাসমান বাজার হিসেবে এক সময়ে পরিচিত ছিল। বিক্রির জন্য গোলপাতা ও সুন্দরী কাঠ সন্ধ্যা নদী তীরবর্তী উপকূলে জেগে ওঠা চরে চলতো রমরমা ব্যবসা। কালের বিবর্তনে সুন্দরী কাঠের দুষ্প্রাপ্যতা এবং গোলপাতা ব্যবহারের স্বল্পতার কারণে থমকে পড়ে বিশাল আকৃতির ভাসমান বাজারের রূপরেখা। শুরু হয় দেশীয় কাঠের ভাসমান বাজার।

এটি দক্ষিণ অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঠের বাজার। সর্ববৃহৎ কাঠের বাজার হওয়া সত্ত্বেও এখানে রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঠের চরের হাটে রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যবসায়ীরা সহজ ও স্বল্প লভ্যাংশ ব্যাংকিং সুবিধা না পাওয়া, ব্যবসায়ী নামে দালালচক্রের উৎপাত, নদীপথে জলদস্যুদের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বৃক্ষ বিনাশসহ নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ব্যবসা ঐতিহ্যক্রমে বিলীনের পথে।

জানা যায়, আনুমানিক ১৯১৭ সালের প্রথম দিকে পিরোজপুর এলাকার তৎকালীন বাকেরগঞ্জের আওতাধীন বর্তমান নেছারাবাদ উপজেলায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছকে কেন্দ্র করে কাঠ ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। ১৯১৮ সালের শেষদিকে নেছারাবাদের সন্ধ্যা নদীর তীরঘেঁষে একাধিক খালে গাছ বেচাকেনার জন্য ভাসমান কাঠের হাট গড়ে ওঠে।

সুন্দরী কাঠ ব্যবসায় সরকারের বাধা নিষেধের পর থেকেই নেছারাবাদে গড়ে ওঠে মেহগনি, চম্পল ও রেইনট্রিসহ নানা দেশীয় কাঠের বৃহত্তর কাঠ বাজার। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা উপজেলার কাঠ মোকামগুলোর কাছ থেকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কাঠ কিনেন। আর এসব মালামাল ট্রাক, লঞ্চ ও কার্গোসহ বিভিন্ন পরিবহনে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান স্ব স্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিবহন সংকট ও পাইকারি ক্রেতার অভাবে সরবরাহ করা কাঠ নিয়ে প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নেছারাবাদের কাঠ ব্যবসায়ীরা। সময়মতো পরিবহন সংকটে গাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় ঋণের বোঝা দিন দিন ভারী হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

নানাবিদ প্রতিকূলতার মধ্যেও বরিশাল, খুলনা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, মুলাদী, মুন্সীগঞ্জ, যশোর, ঝিনাইদহ, নোয়াখালী, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও হবিগঞ্জসহ দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখনো স্বরূপকাঠির এই ভাসমান কাঠের হাটে ব্যবসায় জড়িত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঠের মোকাম গড়ে তুলছেন। নদীপথে দূর থেকে আসা কাঠ ব্যবসায়ীরা জলদস্যুদের ভয়ে ২৫-৩০টি নৌকার বহরে একই সঙ্গে স্বরূপকাঠির মোকামে আসে। কাঠ বেচাকেনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া আবার গল্প-গুজব করেন। যে যার মতো বেচা-কেনা শেষে আবার সারিবদ্ধ নৌকাগুলো নিয়ে নদীপথে চলে যায়।

নেছারাবাদের কাঠ ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মৃধা বলেন, একটি গাছ চূড়ান্তভাবে ব্যবহারের আগে ৫-৬ বার বেচাকেনা হয়। দাঁড়ানো গাছ কাটা থেকে ব্যবহারের পর্যায় পর্যন্ত ৮ ধরনের শ্রমিক রয়েছে।

কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির কাছে এই কাঠ ব্যবসার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানায়, দেশের বড় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে জীবিকার অন্বেষণে অন্য কোনো কাজকর্মে চলে যেতে হবে। বর্তমানে কাঠের দাম অনুযায়ী ব্যবসা করা যাচ্ছে না।

এদিকে উপজেলার কাঠ ব্যবসার প্রচার ও প্রসার দেশজুড়ে পরিচিত লাভ করায় এ ব্যবসায় আকৃষ্ট হয়ে কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়াচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকরাও। তারা বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ ব্যবসায় শুরু করে পরিবার নিয়ে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছিল। নানান প্রতিকূলতার কারণে কাঠ বাজারে ক্রেতা না থাকায় মহাশঙ্কায় পড়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক ব্যবসায়ী জানায়, ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। ঋণের চাপে রাতে বাসায় থাকতে পারছি না। ক্রমান্বয়ে ভারী হয়ে উঠেছে আমাদের ঋণের বোঝা। সরকার যদি স্বল্প সুদে আমাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে ঋণের বোঝা কাটিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারতাম।

দেড়শ বছরের পুরানো পিরোজপুরের নেছারাবাদ কাঠ বাজার। অবকাঠামো কিংবা আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য এখানে বিক্রি হয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাঠ। নদী পথে ট্রলারে সরবরাহ হয় দূর দূরান্তে। এই বাজারে কর্মব্যস্ত সময় পার করেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। অন্য দিনের চেয়ে হাটবারে কোটি টাকার বেশি পরিমাণ বেচাকেনা হয়।
 
কাঠ বাজারের আড়তদার মো. মাসুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাই কাঠ কিনতে এখানে আসেন। এটি শত বছরের পুরোনো ব্যবসা।
 
কাঠের সহজলভ্যতাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ক্রিকেট ব্যাট ও ফার্নিচারের জমজমাট ব্যবসা। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান।

কেকে/বি
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দ্বিতীয় বারের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন দ্বৈরথ
বয়ান শিল্পাঙ্গনের তৃতীয় নাট্য কর্মশালা ৩০ নভেম্বর থেকে
অস্থিতিশীল বিদ্যুৎ খাত : উত্তরণের উপায়
প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
ধামরাইয়ে সাত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ১৫ লাখ জরিমানা
বিএনপি যে কথা দেয় সে কথা রাখে : নাসিরুল ইসলাম
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close