কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি ডাকাত ও অপহরণচক্রের তৎপরতা চরম আকার ধারণ করেছে। এতে বাহারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। এছাড়া নারী, শিশু ও বয়স্করা ডাকাতির ভয়ে বাড়ি ছেড়ে মসজিদ ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।
জানা গেছে, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর পাহাড়সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। এই সুযোগে পাহাড়ি ডাকাত ও অপহরণকারীরা দিন-রাত যেকোনো সময় লোকজনকে ধরে নিয়ে পাহাড়ে আটকে রাখছে। রাত হলে বাড়ি-ঘরে হামলার চেষ্টা, গুলি ছোড়া ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে মূল্যবান কোনো জিনিস না পেলে বাসার লোকজনকেই অপহরণ করে নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে এই পাহাড়ি অপহরণকারী ও ডাকাতচক্রের হাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক এমনকি শিশু পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছেন। ফলে নিজেদের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তায় স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ মসজিদসহ আশ্রয়যোগ্য নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে বাহারছড়ার শীলখালী ও চৌকিদারপাড়া এলাকায় পাহাড়ি ডাকাত ও অপহরণচক্র রাতে পাহাড় থেকে নেমে এসে লোকজনকে অপহরণ ও ডাকাতির চেষ্টা করছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ নির্ঘুম রাত কাটানোর পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
চৌকিদার পাড়ার নুরে আলম বলেন, “বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার বর্তমানে চরম আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। ডাকাতদলের ভয় এতটাই তীব্র যে প্রতিদিন রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন স্থানীয় মসজিদের উঠান ও বারান্দায়। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা খোলা জায়গায়, অন্ধকারে আতঙ্কে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় ডাকাতদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিরাতেই গুলির শব্দ শোনা যায়। পাশাপাশি বাড়িঘরে হামলার চেষ্টা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে।”
শীলখালীর লিয়াকত আলী জানান, “গত পরশুদিন ২০-৩০ জনের একটি ডাকাতদল আমাদের গ্রামে হানা দেয়। এ সময় গ্রামের লোকজনের প্রতিরোধের মুখে ডাকাত দল পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আমরা খুবই ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকি।”
জুবায়ের ইসলাম জুয়েল বলেন, “ডাকাত প্রতিরোধে গত দু’দিন ধরে আমাদের গ্রামে পাহারায় আছি। ডাকাত ও অপহরণ কারীদের প্রতিরোধে আমরা সব সময় প্রস্তুুত।”
শীলখালী জুম পাড়ার প্রবাসী আব্দুল্লাহর ছেলে শিশু ইমরান খান নয়ন জানান, “শুক্রবার মাগরিবের সময় তার গ্রামে ১০-১৫ জনের একদল অস্ত্রধারী ডাকাত এসে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে গ্রামের লোকজন তাকে খুঁজতে পাহাড়ের দিকে এগোলে ডাকাতরা চাপের মুখে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখার পর তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।”
শামলাপুরের শহীদ উল্লাহ বলেন, “চৌকিদার পাড়ায় ডাকাত আতঙ্ক এতটাই তীব্র যে স্থানীয়রা নিজ ঘরে থাকতে না পেরে প্রতিদিন দলবদ্ধভাবে মসজিদের উঠানেই রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রামবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।”
কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ও উখিয়া–টেকনাফ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, “বাহারছড়া ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।”
বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, “শীলখালী এলাকায় ২০-৩০ জন ডাকাত দল ওই গ্রামে আসার সংবাদ পেলে আমরা যেখানে দ্রুত পৌঁছলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। ডাকাত ও অপহরণ কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত রেখেছি এবং কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয় আমরা সর্তক আছি।”
কেকে/ আরআই