জামালপুরের মাদারগঞ্জে ইসলামাবাদ ওয়াছিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্যানেটারি ব্যবসা চালিয়ে আসছেন স্থানীয় আ. লীগ নেতা।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে টিনসেড ঘরে চলছে ‘মেসার্স আলমগীর এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঘরটির চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নানা ধরনের স্যানেটারি সামগ্রী। দেখলে মনে হয় এটি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়ের মাঠ নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তোয়াক্কা না করেই কয়েক বছর ধরে স্কুল মাঠে স্যানেটারি ব্যবসা চালিয়ে আসছেন মেসার্স আলমগীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর কবির।
আলমগীর মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ও আ. লীগের সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমানের ছেলে।
বিগত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সাজুর সময় থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে মাসিক ১৫ শত টাকায় মাঠের অংশটি ভাড়ায় দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে আলমগীর কবির বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখলে নিয়েছেন।’
আ. লীগ সরকার পতনের পর বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়।
অভিযুক্ত আলমগীর কবির বলেন, ‘বিগত কমিটি আমাকে ৩ বছরের চুক্তিতে জায়গা দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে ২বার নোটিশ দিয়েছে জায়গা ছাড়ার জন্য। যদি আবার সময় বাড়িয়ে নিতে পারি, তাহলে নেবো।’
বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান মুর্তুজা ও নবির হোসেন বলেন, ‘আমরা মাঠে খেলতে গেলে স্যানেটারি সামগ্রীতে ধাক্কা লেগে প্রায়ই আঘাত পাই। দৌড়াতে গেলেই ঝুঁকি থাকে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের তহবিল বৃদ্ধির জন্য মাসিক ১৫ শত টাকায় জায়গাটি ভাড়ায় দেওয়া হয়। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে যে কোনো সময় জায়গা খালি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের পরামর্শে মাঠ খালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা ৩ দফায় আলমগীরকে নোটিশ দিয়েছি প্রথমে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সালের ২৩ অক্টোবর, এবং সর্বশেষ তদবিরের পর ১ মাস সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও তিনি জায়গা খালি করেননি। এখন এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ শিক্ষার্থীদের জন্যই উন্মুক্ত। অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। যদি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, সেটি সঠিক হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
স্থানীয়দের দাবি, ‘স্কুল মাঠ শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য ফিরিয়ে দিতে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
কেকে/বি