দিনাজপুরের খানসামা (পাকেরহাট) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, জনবল সংকট ও প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে হাসপাতালের পরিবেশ দিন দিন আরও নাজুক হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
রোগীরা বলছেন, ‘চিকিৎসা নিতে এসে এখন তাদের সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ করতে হচ্ছে হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের সঙ্গে।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশ গেটের দেয়াল স্যাঁতসেঁতে, করিডরজুড়ে দুর্গন্ধ, টয়লেটে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং বাথরুমে পানি জমে আছে। কিছু টয়লেটে দরজাও নেই, লাইট নেই—যা বিশেষ করে নারী রোগীদের জন্য চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ওয়ার্ডের বেডের পাশেও আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। জীবাণুনাশক ব্যবহার না করায় সংক্রমণের ঝুঁকিও ভয়াবহভাবে বেড়েছে বলে অভিযোগ রোগীদের।
রোগীদের আশঙ্কা—এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসা নিতে এসে আরও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী স্বপন কুমার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাথরুমের অবস্থা এত খারাপ যে, সকাল থেকে একবারও যাইনি। দুর্গন্ধে টেকা যায় না। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো রোগ বাড়বে।”
এক নারী রোগীর স্বজন জানান, জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দুর্গন্ধে বাচ্চাটাকে বুকে নিয়েই বাইরে বসে থাকতে হয়। এটা কি হাসপাতাল?
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, ‘হাসপাতালের দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতার কাজ দীর্ঘদিন অবহেলিত। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘মাত্র দুইজন ক্লিনার দিয়ে পুরো হাসপাতাল চালানো যায় না। জনবল সংকট ভয়াবহ।’
কিন্তু তিনি উল্টো রোগীদেরও পরিবেশ নোংরা রাখার দায়ে অভিযুক্ত করেন—যা আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।
স্থানীয়দের মতে দায়িত্বহীনতার চরম উদাহরণ দেখাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ।
তাদের ভাষায়, যেখানে সরকারের নির্দেশ পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, সেখানে হাসপাতালেই যদি এ অবস্থার সৃষ্টি হয়, সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট উপজেলা হলেও প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীর চাপ থাকে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। শিগগির পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের দাবি—এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই এলাকায় হাজারো মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরসা। তাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবেশ স্বাভাবিক করে পরিচ্ছন্নতা ও সেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো নতুন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
কেকে/এমএ