সাভারের সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নামে মামলা রুজু করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় ও মারধরের অভিযোগে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বুধবার রাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক লিখিত এজাহার দায়েরের পর সাভার মডেল থানা পুলিশ মামলা দুটি রেকর্ড করে।
এর মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ খান।
সিটি ইউনিভার্সিটির করা মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির এক হাজার শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাতনামা আসামী করার পাশাপাশি মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বেআইনীভাবে সমবেত হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করে যানবাহনে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগসহ পেট্রোল বোমা ও হাত বোমার ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার অফিসকক্ষে ভাংচুর, দামি জিনিসপত্র লুটপাট এবং ১৫ লক্ষ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ব্যাচেলর প্যারাডাইসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, ড্যাফোডিল শিক্ষার্থী আহত করাসহ হামলার পর ১১ জন ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে সারারাত আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন, মারধর এবং মনস্তাত্ত্বিক ভয় দেখিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া জানান, তদন্ত করে এবিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান জানান, দু’টি মামলা হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির মামলার বাদি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। এজাহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাত ১ হাজারের অধিক ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। আর ড্যাফোডিলের মামলায় এজাহারনামীয় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদি হয়েছেন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনার তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এটা কেন ঘটলো তদন্ত করতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা সীমাবদ্ধ থাকব। আইনগত বিষয় রাষ্ট্রের আইনে পরিচালিত হবে। গতকাল ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে, আজকে আমরা প্রথম পরিদর্শন করছি। এখানে কি কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পরিদর্শন করে গেলাম। আমরা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে লিখিত আকারে বক্তব্য চাইবো, তাদের বক্তব্য পাওয়া সাপেক্ষে এবং আশপাশের যে সিসিটিভি আছে, সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা সাপেক্ষে একটা তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আমরা প্রস্তাব করবো। দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে সেটি। পুনরায় যেন দ্রুত ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালু হয়, সেটিও আমরা দেখবো।
সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, কি ধরনের ও কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারা সেটি পরিদর্শন করছেন। ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা দৃশ্যমান। ইউজিসির তদন্ত চলছে, তারা যে ব্যবস্থা নেবেন, আমরা সেটি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সন্ধ্যায় ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের বাসায় হামলা চালায়। এর পর ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা পাল্টা সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা করে। এসময় বাস ও প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় তারা। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ড্যাফোডিলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সেখান থেকে চলে আসেন। তবে কিছু শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়েন। পরে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাতের ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরদিন আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হস্তান্তর করে। তবে ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কেকে/ আরআই