বেকারত্ব নিয়ে হতাশায় দিন কাটতো কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মৎস্য উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিকের। স্বপ্ন দেখছিলেন বেকারত্ব ঘুচিয়ে সংসারের হাল ধরবেন এই যুবক। এমন স্বপ্ন নিয়ে আয়নালেরঘাট এলাকায় দুধকুমার নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।
জাল, বাঁশ ও ড্রামসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে দুইটি ঘেরে তৈরি করে ২০টি খাঁচা। ঘেরের সাথে তৈরি করেন কর্মচারীদের থাকার ভাসমান ঘর ও কাজ করার জন্য একটি নৌকা। অবশেষে সেই ঘেরে ছেড়ে দেন তেলাপিয়া মাছের পোনা। গেল এক বছরে তার ঘেরে একেকটা মাছের ওজন হয়েছিলো প্রায় আধা কেজি। এই দীর্ঘ সময়ে ঘের তৈরির উপকরণ, মাছের পোনা ও খাবার ক্রয়, কর্মচারীদের মজুরিসহ তার খরচ হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকা। এই টাকা যোগান দিতে ধার করতে হয়েছে তাকে। মাছের ঘের থেকে আয় করে সংসারের সচ্ছলতা ও সুখ ফেরানোর স্বপ্ন দেখলেও নিয়তির নির্মম পরিহাস, আকস্মিক নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিমিষেই প্রবল স্রোতে ভেসে যায় সেই স্বপ্ন।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাছের গুড়ি ভেসে আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মাছের ঘের। বের হয়ে যায় প্রায় সব মাছ। যা ছিলো সেগুলোও ঘোলা পানিতে মরে যাওয়ায় এখন সর্বশান্ত হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ওই মৎস্য উদ্যোক্তা।
আবু বকর সিদ্দিক জানান, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে কিছু একটা করার চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু কী করবেন? এমন হাজারও জল্পনা কল্পনা শেষে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় দুধকুমার নেদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ঘেরে পরিচর্যার একপর্যায়ে বিক্রি উপযোগী হয়েছে মাছগুলো। তবে সে আশায় গুড়েবালি। পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের সব মাছ।
মৎস্য উদ্যোক্তা নিজেসহ ঘেরে কাজ করতো আরও তিন কর্মচারী। সেখানে কাজ করে সে আয়েই সংসার চলতো তাদের। এখন এই ভাসমান ঘেরের ক্ষতিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। অপরদিকে স্থানীয়রা তার ঘের দেখে মাছ চাষে উৎসাহিত হলেও ক্ষতির মুখে পড়ায় হতাশ তারা।
মৎস্য ঘেরের কর্মচারী হাফিজুর রহমান মিয়া, আমিনুল ইসলাম ও হাফিজুল ইসলাম জানান, এই ঘেরের মাধ্যেমে কাজের সুযোগ পেয়ে তারাও খুশি। এই তাদের সংসার চললেও এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারাও। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে চলছে তাদের সংসার।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ‘নিয়মিত মৎস্য ঘরে শ্রম দিত আবু বকর সিদ্দিক। তার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা আসলেই কষ্টকর। তাই, তার পাশে দাঁড়াতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিকের মাছের ঘের পানির স্রোতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমরা পরিদর্শন করেছি। এর আগেও কয়েকবার ঘের পরিদর্শন করে পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ঘের চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এতে সব মাছ বের হয়ে গিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে প্রকল্পের আওতায় এনে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাকে সহায়তা করা হবে।’
কেকে/ এমএ