এক সময় নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এখন মারাত্মক বায়ু দূষণের কবলে। সম্প্রতি বরেন্দ্রশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের রেলগেট ও বন্ধগেট এলাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পি.এম ২.৫) বাংলাদেশের নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক বেশি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে বরেন্দ্রশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে পরিচালিত এক চেতনতামূল প্রচারণা ও গবেষণায় এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে আসে।
বারিন্দ এনভায়রনমেন্টের সহযোগিতায় প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন খানের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শুষ্ক মৌসুমের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। রেলগেট মোড়ে পি.এম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ৮৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, পি.এম ১০ এর মাত্রা ৯৭। বন্ধগেট এলাকায় যথাক্রমে ৭৮ এবং ৯১ মাইক্রোগ্রাম। বিসিক এলাকায় পি.এম ২.৫ ও পি.এম ১০ ছিল যথাক্রমে ৫৭ এবং ৬৯ মাইক্রোগ্রাম।
বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টার জন্য পি.এম ২.৫ এর সহনীয় মাত্রা ৬৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং পি.এম ১০ এর জন্য ১৫০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। ফলাফল অনুযায়ী, রেলগেট ও বন্ধগেট এলাকায় পি.এম ২.৫ জাতীয় মানের চেয়ে অনেক বেশি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ গড় পি.এম ২.৫ ছিল ৭৬, ২০২৩ সালে ৯৭ এবং ২০২৪ সালে বেড়ে ১২৫ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পি.এম ২.৫ সরাসরি ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে, ফলে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। পি.এম ১০ কণার কারণে চোখ, নাক ও গলায় অস্বস্তি হয়।
গবেষকরা বায়ু দূষণের মূল কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, গাছ কাটা, পুকুর ভরাট ও নির্মাণ কাজের সময় বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ না মেনে চলাকে দায়ী করেছেন। ২০২৩ সালের বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ গবেষণাতেও ঢাকা ও রাজশাহীর বায়ু দূষণের জন্য একই কারণগুলো দায়ী করা হয়েছিল।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শহরজুড়ে পরিকল্পিতভাবে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো। বিশেষ করে, আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম, নিম এবং সজনে গাছের মতো উপকারী বৃক্ষরোপণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গবেষকদের মতে, সজনে গাছ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ কঠোরভাবে মেনে চলা, নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধ করা এবং অবৈধভাবে দখল হওয়া পুকুরগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে একটি গাছ কাটার পরিবর্তে অন্তত তিনটি নতুন গাছ লাগানোর নিয়ম বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কেকে/ আরআই