মো. আবু নাছের রতন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:১৩ পিএম

ছবি: প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাধিকা-নবীনগর সড়কের পাশে বার আউলিয়া বিল এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি সাইনবোর্ডবিহীন রহস্যময় কারখানা। সেখানে রাতে পুরোনো টায়ার পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে সড়কে ব্যবহৃত কালো তৈলাক্ত পদার্থ, যা বিটুমিন নামে পরিচিত। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়া চলছে কোনো অনুমোদন ছাড়াই—প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য তৈরি করছে ভয়াবহ হুমকি।
স্থানীয় সূত্র ও নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’ জানায়, কারখানাটি সারাদিন বন্ধ থাকলেও বিকাল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। রাতে চুল্লিতে আগুন জ্বালিয়ে পুরোনো টায়ার পোড়ানো হয়, যেখানে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে গাছ। সারারাত চুল্লি জ্বলতে থাকে, আর উৎপাদিত পদার্থ সংগ্রহ করে বড় লোহার কন্টেইনারে সংরক্ষণ করা হয়— পরে তা বাজারজাত করা হয়।
রাতের আঁধারে চিমনি দিয়ে যে পরিমাণ কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়, তার কোনো হিসেব নেই। বার আউলিয়ার বিলের জলাশয় ও আশপাশের জীববৈচিত্র্যের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টায়ার পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডসহ বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায়, যা বায়ু দূষণ বাড়ায়। পোড়ানো ছাইয়ে থাকা ভারী ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করছে।
ফলে কারখানার শ্রমিকসহ আশপাশের মানুষের শ্বাসকষ্ট, ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ।
বিষয়টি নিয়ে ‘তরী বাংলাদেশ’ সংগঠন জেলা প্রশাসক ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিদর্শক মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “বিষয়টি ‘তরী বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে আজকেই জানতে পেরেছি। কারখানাটির কোনো অনুমোদন নেই, বরং এই ধরনের কারখানার অনুমোদনের সুযোগই নেই। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ না এলে বার আউলিয়ার বিলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।