তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গণমাধ্যমের ভূমিকার আত্মসমালোচনা হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।’
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সভায় মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গণমাধ্যমে যে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব হয়েছে, তা তদন্ত করার জন্য গত মে মাসের শেষের দিকে (অথবা জুন মাসের শুরুতে) জাতিসংঘকে পত্র দেওয়া হয়েছিল। গত আগস্ট মাসে জাতিসংঘ থেকে ইউনেস্কোর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। ইউনেস্কো বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গণমাধ্যমের অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে তদন্তে আগ্রহ দেখায়নি। ইউনেস্কো সাংবাদিকদের আচরণবিধি (কোড অভ্ কনডাক্ট) তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।’
‘যেসব গণমাধ্যম বিগত সরকারের শাসনামলে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব করেছে, সেসব গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদককে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া উচিত, জনগণের কাছে আসা উচিত।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে টেলিভিশন চ্যানেলের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কী ভূমিকা রেখেছে, সে বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করার জন্য তিনি পিআইবি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই গবেষণার কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন মাহফুজ আলম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব গণমাধ্যম নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, উপদেষ্টা সেসব গণমাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
বেসরকারি নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা টেলিভিশনে নতুন মুখ দেখতে চান না, তারাই টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন নিয়ে হাহাকার করছেন।’
মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘আমরা নতুন মিডিয়া দিতে চাই। এই নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন মুখ আসবে, নতুন ন্যারেটিভ (বয়ান) আসবে, নতুন বক্তব্য আসবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর পিআইবির প্রকাশিত গ্রন্থের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘সার্মথ্য অনুযায়ী পিআইবি বেশ ভালো প্রকাশনা করেছে। এসব প্রকাশনা ইতিহাস চর্চায় কাজে দেবে। একইসঙ্গে রেফারেন্স হিসেবেও ব্যবহৃত হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশ করায় উপদেষ্টা পিআইবি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘পৃথিবীতে কোনো বিপ্লব ষোলা আনা সফল হয় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সফলতা হলো মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছেন।’
ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কম।’
সলিমুল্লাহ খান দেশের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ মাহ্বুব উল্লাহ্ বলেন, ‘ইতিহাস থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুছে ফেলা যাবে না। এই গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন অভ্যুত্থানের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এই ধারণা সঠিক নয়। এই দেশকে গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।’
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তিনি জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন গবেষক ও লেখক সাইমুম পারভেজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিম। অনুষ্ঠানে পিআইবি প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গ্রন্থসমূহ হল ‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা : অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ ও ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’। মোড়ক উন্মোচনের পর অনুষ্ঠানে বাংলাফ্যাক্টডটকম (banglafact.com) ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়।
কেকে/ এমএ