ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাটারিচালিত এক ভ্যানচালককে মারধরের পর তার বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শামছুল হক ঝন্টুর (৪৩) বিরুদ্ধে।
উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ফানুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শামছুল হক ঝন্টুর জাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ভুক্তভোগী ভ্যানচালক মো. হারুন খান (৪৮) বাদি হয়ে শামছুল হক ঝন্টুকে ১ নম্বর এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু (৪৩),বাচ্চু মুন্সী (৫৫), আব্বাস আলী (৪০), হাবিবুর রহমান (৪৬), আ. হেকিম (৬০), শাহাব উদ্দিন খা (৫৫)।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঝন্টুর নির্দেশ অনুযায়ী তার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার নিয়ে ভাড়ায় না যাওয়ার কারণে ভ্যানচালক হারুনকে মারধর করেন করা হয়। মারধরের বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার (১ অক্টোবর) হারুন খান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) পুলিশ তদন্তে যায়। এতে রাগান্বিত হয়ে পর দিন চেয়ারম্যান ঝন্টু তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে ভ্যানচালকের বাড়িঘর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এমনকি হারুনের উপার্জনের একমাত্র সম্বল ভ্যানটিও নিয়ে যায়।
এদিন হারুনের মা জোবেদা খাতুন(৭৫) ও স্ত্রী জোসনা বেগমকেও (৪৫) বেধম মারধর করে চেয়ারম্যানের লোকজন। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের ভয়ে বাড়িছাড়া ভ্যানচালক ও তার পরিবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভ্যানচালকের বাড়িঘর কুপিয়ে তছনছ করে রাখা হয়েছে। বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ঘরের আসবাবপত্রও লণ্ডভণ্ড করে রাখা হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভ্যানচালক হারুন খান বলেন, ‘সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে বিকালে আমি বাড়িতে আসি। শরীরটা খুব ক্লান্ত এবং গাড়িতে চার্জও নেই। এমন সময় চেয়ারম্যান এসে বলেন, তার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ভ্যানে করে নিয়ে যেতে হবে। তখন আমি বলি-গাড়িতে চার্জ নেই, আমার শরীরটাও ভালো না। আমি যেতে পারবো না। এতেই চেয়ারম্যান রাগে-ক্ষোভে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে আমাকে পিটাতে থাকে। এ নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ করি। থানায় অভিযোগ করার কারণে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার বাড়িঘরে হামলা এবং ভাঙচুর চালিয়ে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখন বাড়িছাড়া। বাড়িতে গেলেই আমিসহ পরিবারের সবাইকে খুন করে ফেলার হুমকি দিয়েছে চেয়ারম্যান। আমি এই ঘটনার সু্ষ্ঠু বিচার চাই।’
জোসনা বেগম বলেন, ‘কয়ডা দিন ধরে আমার স্বামী গাড়ি নিয়ে বের হতে পারে না। বাড়িতেও যেতে পারি না। এখন সন্তানাদি নিয়ে আমরা কোথায় যাব? আর খাব কি! গরীব বলে কি আমরা এই ঘটনার বিচারও পাবো না ‘
জানতে চাইলে শামছুল হক ঝন্টু বলেন, ‘আমার ওপর আনা অভিযোগটি মিথ্যা। হারুনের ওপর এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত। এলাকার কেউ তাকে ভাড়া নিয়ে যেতে বললে সে খারাপ ব্যবহার করে। তাই স্থানীয়রা ক্ষোভে হারুনের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমি এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে ভ্যানচালক হারুন লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএ