প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে এক নিমিষেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শত শত মানুষের স্বপ্ন আর আশ্রয়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শ্রুতিধর ও চর নোহালী গ্রাম দুটি এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপের প্রতিচ্ছবি।
রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে বয়ে যাওয়া এক বিধ্বংসী ঝড়ের আঘাতে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশে গেছে, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। প্রকৃতির এমন আকস্মিক ছোবলে সবকিছু হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে হাহাকার করছে অসংখ্য পরিবার।
গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাত ছিল একরকম পূর্বাভাস, কিন্তু রোববারের সকালের ভয়াল রূপের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গ্রামের মানুষ যখন দিন শুরুর কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখনই আকাশ ভেঙে নেমে আসে এক মহাদুর্যোগ। বাতাসের করাল গ্রাসে মুহূর্তেই উড়ে যায় টিনের চাল, ভেঙে পড়ে আধাপাকা দেয়াল আর কাঁচা ঘরবাড়িগুলো। যারা এক মুহূর্ত আগেও নিজেদের ছোট্ট সংসারে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছিলেন, তারা এখন শুধুই ধ্বংসলীলার সাক্ষী। তাদের মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গেছে, পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেছে চিরতরে।
ছবি : খোলা কাগজ
“আমার তো আর কিছু রইলো না গো”, বুকফাটা আর্তনাদ করে বলছিলেন এক বয়োবৃদ্ধা, যার চোখে জলের ধারা থামছে না। তার হাতের সব সম্বল, স্মৃতির সব চিহ্ন এখন শুধুই মাটির সাথে মিশে গেছে। “কোথায় যাবো এই বুড়ো বয়সে? কে দেবে আশ্রয়?” তার এই প্রশ্ন যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল শত শত গৃহহীন মানুষের মনে। আহত ১৫ জনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও, তাদের শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও বড় তাদের ঘর হারানোর বেদনা। হাসপাতালে শুয়ে থাকা এক মায়ের চোখেমুখে রাজ্যের চিন্তা, তার ছোট্ট সন্তানটিকে নিয়ে এখন কোথায় যাবেন তিনি?
গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, ফলে পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ। অন্ধকার আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে গোটা জনপদ। রাত নামতেই যখন ঠান্ডা হাওয়া বইছে, তখন খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষগুলোর বুক ফেটে কান্না আসে। শিশুদের কান্না, নারীদের হাহাকার আর পুরুষদের নীরব আর্তনাদ যেন প্রকৃতির কাছে এক নীরব প্রশ্ন—আর কত দুর্যোগ সইবে তারা?
ছবি : খোলা কাগজ
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। তাদের জন্য শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানীয় জল, জরুরি আশ্রয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা শুরু করা হয়েছে। এই তালিকার আগে তাদের খাবার ও জেলা প্রশাসানের পক্ষ থেকে তাদের নগদ অর্থ দেওয়া হবে।