রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
গাজায় আসতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:৩৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

যুদ্ধপরবর্তী গাজা উপত্যকা পরিচালনার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে। যেটির নেতৃত্ব দিতে পারেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আরব নেতারা জাতিসংঘে আলোচনায় বসে গাজায় জাতিসংঘের সহায়তা ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দেন।

পরে এটি ফিলিস্তিনিদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়। এ প্রস্তাবে ব্লেয়ারের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি ওয়াশিংটনের সমর্থন পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার কার্যালয় বলেছে, গাজার মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন করবেন না। 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল। একই বিষয়ে গতকাল শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে। 

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, টনি ব্লেয়ার যুদ্ধপরবর্তী গাজা উপত্যকার প্রশাসন পরিচালনার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। তবে রয়টার্স বলছে, তারা এই পরিকল্পনার বিষয়ে তাৎক্ষণিক সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, পরিকল্পনাটির বিষয়ে টনি ব্লেয়ার, ইসরায়েল ও হামাস কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করেননি। 

এর আগে টাইমস অব ইসরায়েল প্রতিবেদনে বলেছিল, পরিকল্পনা তৈরিতে টনি ব্লেয়ার নিজেও অংশ নিয়েছেন। এই প্রশাসনের নাম হতে পারে ‘গাজা ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজিশনাল অথরিটি (জিইটিএ)’। টনি ব্লেয়ারকে এই প্রশাসনের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। 

ইসরায়েলি আরেক গণমাধ্যম হারেৎজের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, এই প্রশাসন অন্তত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারে। এই প্রশাসনের কাঠামোর ধারণা নেওয়া হয়েছে তিমুর লেস্তে ও কসোভোর অন্তর্বর্তী সরকারের মডেল থেকে। প্রস্তাব অনুযায়ী, দক্ষিণ গাজার সীমান্তবর্তী মিসরের আল-আরিশ শহরে এই প্রশাসনের দপ্তর তৈরি হবে। পরে জাতিসংঘ অনুমোদিত আরব দেশগুলোর একটি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে গাজার ভেতরে কার্যক্রম শুরু করবে। পরে তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। 

এর আগে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার সময় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের কাছে গাজায় শান্তি স্থাপনের একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই উদ্যোগটি সম্পর্কে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিসর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান ওয়াকিবহাল। 

মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এএফপি আরো জানায়, এই পরিকল্পনায় হামাস থাকবে না। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সীমিত ভূমিকা থাকবে। যে নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হবে তাতে ফিলিস্তিনি সৈন্যদের সঙ্গে থাকবে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সেনারা। গাজা পুনর্গঠন ও নতুন প্রশাসনের জন্য তহবিল দেবে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো। অ্যাক্সিওস আরো জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা প্রথমে তৈরি করেন টনি ব্লেয়ার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে জামাই জ্যারেড কুশনার। পরে তা গত ছয় মাসে হালনাগাদ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ব্লেয়ার আগস্ট মাসে হোয়াইট হাউসের একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এই পরিকল্পনাকে খুবই ভালো বলে বর্ণনা করেছিলেন। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত বৃহস্পতিবার বলেছেন যে তিনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে ট্রাম্প এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে তিনি গাজায় হামাসের ভবিষ্যত শাসনের ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে তাদের নিরস্ত্র হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে, ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে গাজার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা গ্রহণের যে পরিকল্পনা এসেছিল, তাতে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কথা ছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সেই পরিকল্পনা পরে বাতিল করা হয়। 

এ মাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে, যেখানে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে পশ্চিম তীর এবং গাজা নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে হামাসের জন্য পুরস্কার বলে সমালোচনা করেছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক মহলে ওই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধসংক্রান্ত সরকারি তদন্তে বলা হয়, তিনি তৎকালীন গোয়েন্দা তথ্যের ভুল ও অসম্পূর্ণতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বিশেষ করে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই। 

গাজার অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ে আলোচনায় ব্লেয়ারের সম্পৃক্ততার খবর এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্র হতে হবে। 

চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পরে ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ আরও কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দেয়। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে এটিকে হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল বলে অভিহিত করেছে। যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, এই কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের অর্থ হলো, হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং সরকার বা নিরাপত্তা কাঠামোয় তাদের কোনো জায়গা হবে না। 

ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না: ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না। এমনটাই ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে গাজা নিয়ে শিগগিরই সমঝোতা হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। তার এই ভাষণের আগে গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না... এটা কোনোভাবেই ঘটবে না।” ট্রাম্প আগামী সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি আরো জানান, গাজা নিয়ে সমঝোতা “প্রায় কাছাকাছি”। 
জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ বয়কট অনেকের: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন বহু দেশের প্রতিনিধি তার প্রতিবাদস্বরূপ অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন। 

অন্যদিকে, কিছু প্রতিনিধি করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। সভাপতি একাধিকবার বলেন, ‘দয়া করে, হলে শৃঙ্খলা বজায় রাখুন’। তবে, এসব কথা উপেক্ষা করে হল ত্যাগ করেন অনেকেই। বক্তব্যের শুরুতেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গত বছর যেই মানচিত্রটি তিনি জাতিসংঘের মঞ্চে দেখিয়েছিলেন, সেটিই তিনি আবার এনেছেন—যার শিরোনাম ছিল ‘ঞযব ঈঁৎংব’ বা ‘অভিশাপ’। নেতানিয়াহু মানচিত্রে বিভিন্ন দেশের অংশ দেখিয়ে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ, এবং ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘সবাই চলে গেছে।’ 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নেওয়া হয়। সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন বলেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। যদিও ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
ফতুল্লায় ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close