বান্দরবানে দিনদিন বাড়ছে কাজু বাদামের আবাদ। একসময় পার্বত্য জেলায় তেমন গুরুত্ব না দিলেও বর্তমানে প্রচুর চাহিদা থাকায় আর বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় অনেকেই এই কাজু বাদামের আবাদ বাড়িয়েছে। এদিকে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের দেওয়া হচ্ছে নানা সহায়তা।
কৃষি বিভাগ বলছে, দামি ফল হিসেবে কাজু বাদামের পরিচিতি সবার কাছে। এটি খুবই পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের ফসল। ক্যান্সারের এন্টি অক্সিডেন্ট, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শিশুদের মস্তিস্কের বিকাশের জন্য কাজুবাদামের জুড়ি নাই। আমদানি নির্ভর এই ফলটি নতুনভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ের চাষীদের।
বান্দরবান সদর, লামা, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে এখন চাষীরা কাজু বাদাম চাষ করছে। আর বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় আর্থিকভাবে সফলতা এসেছে বহু পরিবারে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাজু বাদাম চাষী মো. লোকমান জানান, বান্দরবানের মাটি আর আবহাওয়া কাজু বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
কাজু বাদাম চাষ করে আগের চেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবনধারণ করছেন জানিয়ে মো. লোকমান বলেন, ‘বান্দরবানের কৃষি বিভাগ কাজু বাদাম চাষের জন্য বিভিন্নভাবে চাষীদের সহায়তা করছে। আর তাদের উৎসাহের ফলে বান্দরবানে কাজু বাদামের আবাদ বাড়ছে।’
বান্দরবানের রুমা উপজেলার কাজু বাদাম চাষী মং ক্যা বলেন, ‘একসময়ে বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে প্রচুর কাজু বাদামের গাছ ছিল, তখন চাষীরা এই গাছ যে এত দামী গাছ তা উপলদ্ধি করতে পারেননি। কালের পরিক্রমায় চাহিদা বাড়ায় বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে কাজু বাদামের আবাদ বাড়ছে আর বান্দরবানের উৎপাদিত বাদাম এখন দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে।’
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার কাজুবাদাম চাষী চিংম্যা মারমা বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের একটি প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয় এবং পরে সেখানে উৎপাদন ভালো হওয়ায় আমরা এখন আরও জমিতে কাজু বাদামের চারা রোপণ করছি।’
তিনি জানান, গত বছর কাজু বাদাম বিক্রি করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বান্দরবানে ২ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে কাজু বাদাম আবাদ হয়েছে। তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ দশমিক ৯০মেট্রিক টন। আগামীতে এই উৎপাদন আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।
বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক লিটন দেবনাথ বলেন, ‘বান্দরবানে কাজু বাদাম চাষ করে চাষীরা লাভবান হচ্ছে। কাজু বাদাম চাষ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, আর একটি গাছ অনেক বছর জীবিত থাকে। আর সেখান থেকে নিয়মিত ফল আহরণ করা সম্ভব।’
তিনি জানান, গত বছর বান্দরবানে কাঁচা অবস্থায় কাজু বাদাম বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা, আর এ বছর দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকি, পরামর্শ ও বিভিন্ন সহায়তায় ফলে চাষীরা কাজু বাদামের আবাদ বাড়াচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহ্ নেয়াজ বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে বান্দরবানে সরকারিভাবে কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে কাজু ও কফি চারা বিতরণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরে কৃষকরা নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজু বাদাম চাষে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে। আগে বান্দরবানে প্রচুর কাজু বাদামের গাছ ছিল। কিন্তু সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রি করতে না পারায় বহু কৃষক কাজু বাদাম চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফলে মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু কৃষি বিভাগের বিভিন্ন সহায়তা বৃদ্ধি ও পরামর্শের ফলে এখন বান্দরবানের ৭ উপজেলায় কাজু বাদাম আবাদ বেড়েছে।’
তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বান্দরবানে ২ হাজার ৬১৯ দশমিক ৪৭ হেক্টর জমিতে কাজু বাদাম আবাদ হয়েছিল। আর তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৬০৬ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বেড়ে ২ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম আবাদ হয়েছে। আর তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ দশমিক ৯০মেট্রিক টন।
কেকে/ এমএ